সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জাহানারা হসপিটালের বিরুদ্ধে ডিগ্রিধারী ডাক্তার পরিচয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রতারণা, ভূল চিকিৎসা দেয়া, ইচ্ছে মতো ফী আদায়, রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার, অনঅভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স দিয়ে চিকিৎসা দেয়া ও সিজার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঐ হসপিটালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পরিচালক সালমা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে এফসিপিএস পাশ নয়, তবুও নিজস্ব প্যাডে, চটকদার ভিজিটিং কার্ডে ও বিভিন্ন প্রচারপত্রের লিফলেটে এফসিপিএস পাশ লিখে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও কয়েকজন ভুক্তভোগী রোগী জানান, দীর্ঘ ২০১৪ সালে উপজেলার পৌর এলাকার জোড় পোল সংলগ্ন একটি ১তলা বিশিষ্ট ভবন ভাড়া নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার হসপিটাল স্থাপন করে। এই হসপিটালের নাম দেয়া হয় জাহানারা হসপিটাল। হসপিটালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন প্রচারপত্রে ও প্যাডে এফসিপিএস (জেনারেল সার্জারী) কোর্স সমাপ্ত ও তার স্ত্রী হসপিটালের পরিচালক সালমা আক্তার এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অবস) লিখে নিজেদেরকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দেয়। প্রকৃতপক্ষে তারা উভয়ের এ ধরণের ডিগ্রী নেই বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কৌশল্যারবাগ গ্রামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, তার স্ত্রীর প্রসবের ব্যাথা উঠলে জাহানারা হসপিটালে নিলে সালমা আক্তার নিজের নামের পাশে এফসিপিএস (গাইনী এন্ড অবস) বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লিখে সিজার করেন। সিজার অপারেশন করানোর সময় ঐ ডাক্তার তার নবজাতক শিশুর বাম হাত ভেঙ্গে ফেলে। পরে বিষয়টি নিয়ে সে প্রতিবাদ করলে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়। উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের কালু মিয়ার পুত্র সেলিম তার স্ত্রীর প্রসবের ব্যাথা উঠলে এ হাসপাতালে আনলে সালমা সিজার অপারেশন করান। পরে তার হাসপাতালের ফি ধরা হয় ৩০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ফি নেয়ায় সেলিম প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে এফসিপিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বলেন, এ উপজেলায় আমার মত ডিগ্রিধারী একজন ডাক্তারও নেই। তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই এফসিপিএস পাশ ডাক্তার। তাই তাদের ফি বেশী।
সোনাইমুড়ী উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের দুলাল মিয়া অভিযোগ করে জানান, ইতিপূর্বে তার স্ত্রী ফিরোজা আক্তার রুপীর জরায়ুতে সমস্যা দেখা দিলে জাহানারা হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার ও হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম রোগীর আত্মীয় স্বজনদের সাথে মোটা অঙ্কের দর কষাকষি করে অপারেশন করাকালীন সময়ে পেট কেটে ব্যর্থ হয়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে ঢাকায় রেপার করে।
পরে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে হাসপাতালের পরিচালক ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে রোগীর স্বামী দুলাল মিয়া বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাইনুল ইসলাম জানান, এফসিপিএস পাশ না হলে লিখা যাবেনা। তবে লিখলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুল চিকিৎসা দেয়া ও অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগের আলোকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোনাইমুড়ী উপজেলা বেসরকারি হসপিটাল মালিক সমিতির একজন সদস্য জানান, জাহানারা হসপিটালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পরিচালক সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসাসহ বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের এসব অনিয়মের অভিযোগ আামাদের কাছে একাধিকবার এসেছে।
এসব বিষয়ে জানার জন্য জাহানারা হসপিটালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।