1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন

সোনার দামে ‘নতুন’ নিয়ম আসছে

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), মজুরিসহ সোনার অলংকারের দাম নির্ধারণের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। চলতি মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেটি হলে ২২ ক্যারেট বা ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকায় পৌঁছে যাবে।

বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকারের দাম ৭২ হাজার ৬৬৬ টাকা। প্রতি গ্রামের দাম ৬ হাজার ২৩০ টাকা। তার সঙ্গে ২৫০ টাকা মজুরি যোগ হবে। মজুরিসহ প্রতি গ্রাম সোনার দাম হয় ৬ হাজার ৪৮০ টাকা। তার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ধরলে প্রতি গ্রামের দাম হবে ৬ হাজার ৮০৪ টাকা। এভাবে এক ভরির সোনার অলংকারের দাম দাঁড়াবে ৭৯ হাজার ৩৬১ টাকা।

রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে গত বুধবার জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খানের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সাধারণ সভা হয়। এতে সমিতির কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতা এবং সাধারণ জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

সভায় সোনার অলংকারের সঙ্গে ভ্যাট ও মজুরি যোগ করে পুনরায় দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে সমিতির সদস্যদের জন্য আবাসন প্রকল্প করা হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি ভ্যাট হার হ্রাস ও অসাধু ভ্যাট কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নজরে আনতে কাজ চলবে।

সাধারণ সভায় ভ্যাট, মজুরিসহ দাম নির্ধারণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সমিতি কোন পথে হাঁটবে, সেটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘ভ্যাট, মজুরিসহ দাম নির্ধারণ করলে সোনার দামের চেহারা ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছে যাবে। যদিও সাধারণ সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের প্রায় ৭০ শতাংশ সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান ছিল। তারপরও পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছি। জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। অনেকের আশঙ্কা, ভ্যাট ও মজুরিসহ দাম নির্ধারণ করা হলে ছোট ব্যবসায়ীদের দোকানে ক্রেতারা যাবেন না। তাতে তাঁরা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

মজুরি নয়, শুধু ভ্যাটসহ সোনার দাম নির্ধারণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি আমরা। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে আবার বৈঠক হবে। তার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শও আমরা নেব। ভ্যাটসহ দাম নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন থাকলে হয়তো বৈঠকের দরকার নাও হতে পারে।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি
অন্যদিকে জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মজুরি নয়, শুধু ভ্যাটসহ সোনার দাম নির্ধারণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি আমরা। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে আবার বৈঠক হবে। তার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শও আমরা নেব। ভ্যাটসহ দাম নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন থাকলে হয়তো বৈঠকের দরকার নাও হতে পারে।’ সোনার মতো একইভাবে রুপার দামও সমন্বয় হতে পারে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার অলংকারের দাম নির্ধারণের চিন্তাভাবনা বেশ কিছুদিন ধরেই করছিল জুয়েলার্স সমিতি। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে সেটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি নিয়ে সমিতির শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত এগোলেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বিরোধিতা করেন। তখন ভ্যাট বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব বেশি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভ্যাটের হার কমানোর দাবি তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন সমিতির নেতারা। সেটি আদায় হলেই ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণের পথে হাঁটবেন তাঁরা। তারপর হঠাৎ করেই সমিতির নেতারা সাধারণ সভায় ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন।

ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণে পক্ষে সমিতির নেতাদের যুক্তি ছিল, ক্রেতাদের একটি অংশ ভ্যাট দিতে চান না। আবার ভ্যাট পরিশোধে ব্যবসায়ীরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেন। অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলার্সে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসিয়েছে। ফলে দেশের জুয়েলার্স ব্যবসায় সামঞ্জস্য ও স্বচ্ছতা আনার জন্যই ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার অলংকারের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীদের একাংশের শঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাট, মজুরিসহ দাম নির্ধারণ করলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারণ, তখন সোনার দাম ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন না। ঢাকার বড় মার্কেটের জুয়েলার্সগুলো ভ্যাট দিচ্ছে। নতুন প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করা হলে অনেক ব্যবসায়ী নাও মানতে পারেন। সেটি হলে একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
আগে আর পরে, আমাদের অবশ্যই ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতেই হবে। বর্তমানে ভ্যাট ও মজুরি—দুটোই বলবৎ আছে। ফলে নতুন করে সোনার দাম বাড়ছে না।
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, সহসভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি
জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আর পরে, আমাদের অবশ্যই ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতেই হবে। বর্তমানে ভ্যাট ও মজুরি—দুটোই বলবৎ আছে। ফলে নতুন করে সোনার দাম বাড়ছে না।’ ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণ করলে ছোট ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি হবে না। বড়রাই মূলত চাপে থাকবেন বলে দাবি করেন তিনি।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশের বুলিয়ন মার্কেটের দাম পর্যালোচনা করে সোনার দাম নির্ধারণ করে জুয়েলার্স সমিতি। তবে বৈধভাবে সোনা আমদানি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশে সোনার দাম ভরিতে প্রায় সব সময়ই ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক উত্থান-পতন থাকায় গত বছরই ১৪ বার সোনার দাম সংশোধন করা হয়েছে। গত বছরের শুরুতে প্রতি ভরির দাম ছিল ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা। পাঁচ বার দাম কমলেও পুরো বছরে এক ভরি সোনার দাম বেড়েছে ১২ হাজার ৩০৫ টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি