কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে: একুশে ফেব্রুয়ারিতে এবারও শহীদ মিনারের বেদি ভরে গেছে ফুলে ফুলে। যেমনটি ভরেছিল গেল ৬৮ বছর৷
মহামারী করোনা কালেও মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগকারীদের প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না সাধারণ জনগণের৷ লাল-সাদা-হলুদ-বেগুনি কত বাহারি রঙের থোকা থোকা ফুলের স্তবকে ছেয়ে গেছে শহীদ মিনার৷
রোববার একুশের প্রথম প্রহরেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপরেই সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া শহীদ মিনারের উন্মুক্ত দ্বার৷ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন৷ করোনা সত্বেও পাঁচজনের বেশি মানুষ এক সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷
করোনার কারণে জনসমাগমকে সীমিত করা হলেও শোকে ছিল না কমতি৷ হাতে ফাগুনে ফোটা রঙিন ফুলের স্তবক আর কণ্ঠে বিষাদমাখা চিরচেনা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ নিয়ে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া সূর্যসন্তানদের স্মরণ করছে কৃতজ্ঞ জাতি৷
মায়ের ভাষার মান রাখতে সেদিন যারা রাজপথে ছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, সফিক, জব্বার, তাদের অনেকে জীবনের চিরন্তন পরিণতি মেনে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন। অন্যরা বয়সের ভারে নুব্জ্য। কিন্তু তাদের সেই আত্মত্যাগ, সেই বীরত্বের কথা ভুলেনি কৃতজ্ঞ নতুন প্রজন্ম৷
রোববার ভোরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছিলেন রাজধানীর নিমতলীর বাসিন্দা ফরহাদুল ইসলাম৷ বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এসেছি৷ তাই এবারও এসেছি৷ তবে করোনার কারণে একটু সকাল সকালই এসেছি৷ যাতে ভিড় কম থাকে৷
ফুল দিতে এসে ষাটোর্ধ্ব মোখলেসুর ইসলাম বলেন, ছোট বয়স থেকে শহীদ মিনারকে আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে মেনে এসেছি৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমি কিশোর ছিলাম৷ কিন্তু আমার বড় ভাই ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের কাছে জেনেছি এই শহীদ মিনারই আমাদের স্বাধীনতা আদায়ের লড়াইয়ের প্রেরণা ছিল৷ যে প্রেরণা আমি ধারণ করেছি, আমার সন্তানকে ধারণ করতে বলেছি এবং আমি আশা করব আগামী প্রজন্ম শহীদ মিনারের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে এবং সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে৷