এম রাসেল সরকার: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী শেখ রাসেল পার্ক, পার্কটির দুই পাশে দেয়াল না থাকায় রাস্তার ওপর হকারদের দোকানের কারণে এর সৌন্দর্য হারিয়েছে অনেক আগেই। আর বর্তমানে দুপুরের পর থেকেই পার্কের ভেতরে প্রায় অর্ধশত হকার বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে বসছেন। এতে পার্কটিতে আসা দর্শনার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে পার্কের ভেতরের পরিবেশও নোংরা হচ্ছে। হকারদের দাবি, তাঁরা চাঁদা দিয়ে এখানে বসেন।
২০২১ সালের ৯ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পার্কটির উদ্বোধন করেন। শুরুতে কিছুদিন ভালো থাকলেও এখন সেই পার্কের পরিবেশ নেই। এলাকাবাসীর দাবি, পার্কটি খোলা না রেখে বেষ্টনী দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট গেট করে দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এর তত্ত্বাবধান করাও জরুরি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের পক্ষে পার্কটির সংস্কার কাজের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু। তখন পার্কটি ছিল পরিত্যক্ত। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এই আধুনিক পার্কটির সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত এর সংস্কার কাজের সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। এই সময়ের মধ্যেও পার্কের সংস্কার কাজ শেষ না হয়নি। পরে সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রেখেই এই পার্কটি উদ্বোধন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কটির দুই পাশ খোলা। এতে পার্ক ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ফল, মাছ ও চা বিক্রেতাসহ বিভিন্ন পণ্যের হকারদের বসার স্থান। এ জন্য পার্কের প্রবেশপথ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। আর পার্কের ভেতর ঝালমুড়ি, মোজা, বেলুন, শরবতের দোকানসহ প্রায় অর্ধশত হকার নিজেদের পণ্য নিয়ে দখল করে রেখেছেন পার্কের প্রায় অর্ধেক জায়গা।
এখানে বসা হকার লোকমান বলেন, ‘আমরা এখানে চাঁদা দিয়ে বসি।’ কাকে চাঁদা দেন—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। একই কথা বলেন মুড়ি বিক্রেতা মামুনও। তিনিও কাকে চাঁদা দেন তাঁর নাম বলতে রাজি হননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে দোকানের আকারভেদে প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া টয়লেট, পানি, বাতি ও ঝাড়ুদারের জন্য প্রতি দোকানকে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যখন পার্কটি সংস্কার করে, আমরা এ নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। বাস্তবতা হলো এটি এখন হকারদের বাজারে পরিণত হয়েছে। ফলে পার্কের ভেতরে ফেলা বিভিন্ন ময়লা আবর্জনায় এটি নোংরা হচ্ছে। বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসা জসিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, এখানে হকার ও বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে আসাটা নিরাপদ নয়। আর হকারদের উৎপাতে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বাৎসরিক ১৮ লাখ টাকায় পার্কটির ইজারা দেন আনোয়ার হোসেন স্বাধীন নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি কয়েকটি রাইড এখানে স্থাপন করেন।
ইজারাদার স্বাধীন বলেন, ‘পার্কের ভেতর হকার বসায় ও বখাটেদের আনাগোনায় কেউ বাচ্চাদের নিয়ে এসে রাইডে চড়তে চান না। আমি এ ব্যাপারে মেয়র মহোদয়কে কয়েকবার অবগত করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু বলেন, ‘এসব অপসারণের লক্ষ্যে আমি ডিএসসিসির মেয়র মহোদয়, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও স্থানীয় থানার ওসিকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জানান, ‘এর আগে এসব হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। প্রয়োজনে আবার আমরা হকারদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নিব।