হুমায়ুন কবিরের গাড়ির নিচ থেকে বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ ছবি: সংগৃহীত
এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর মুন্সিগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে অল্প বেতনে কাজ নেয় কিশোরটি। কিন্তু অল্প সময়ে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালায় সে। এরপর সে চাঁদা দাবি ও বোমা বানানোর পরিকল্পনা করে। এ জন্য হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখতে শুরু করে। একপর্যায়ে হিন্দি ভাষা ও সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার কৌশল রপ্ত করে সে। আর ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানোও শেখে। এরপরই পূর্বপরিচিত এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে কিশোরটি নিজেকে ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে।
গতকাল বুধবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাকে গ্রেপ্তার করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৪টার দিকে ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে গুলশানের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে বোমা মেরে তাঁর পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া। পরদিন বিকেল ৪টার দিকে পার্কিং করা অবস্থায় হুমায়ুন কবিরের প্রাইভেটকারের চালক গাড়ির নিচে বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পান। বিষয়টি জানালে ডিএমপির বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল এসে বোমাসদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় ব্যবসায়ী হুমায়ুন বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন।
ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর মূলত ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির দিকের পরিচিত। অল্প সময়ে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সে হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে টার্গেট করে। ঘটনার দুই মাস আগ থেকেই সে হুমায়ুন কবিরের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে। সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার কৌশল শেখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারণে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করে। এরপর সে লাল স্কচটেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেনসিল ব্যাটারি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বোমাসদৃশ বস্তুটি তৈরি করে নিজের কাছে রাখে। হুমায়ুন কবির ঢাকা থেকে লৌহজংয়ে গিয়ে তাঁর এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেন। তখন ওই কিশোর সুযোগ বুঝে হুমায়ুন কবিরের প্রাইভেটকারের নিচে স্কচটেপ মোড়ানো বোমাসদৃশ বস্তুটি আটকে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলতে কিছু নেই। কেউ যদি এমন প্রতারণার শিকার হন, তাহলে দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করেন তিনি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকার ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার কিশোরকে আজ ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আদালত আগামী সোমবার শুনানির দিন ধার্য করে তাকে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।
সূত্র: প্রথম আলো