বহুল বিতর্কিত হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীসহ অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ও তাঁর স্বজনরা।আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল ২০২১) ঢাকা রিপোর্ট ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ওই দাবি জানান।সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ছাড়া ও মোর্শেদ চৌধুরীর মাতা নুরনাহার এবং কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুম উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী গত ৭ এপ্রিল আত্নহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর পরিবার জানায়, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুগংয়ের অব্যাহত চাপ, হুমকি ও হামলার কারণে নিরূপায় হয়েকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী আত্নহত্যার পথ বেছে নেন।অশুভ ওই চক্র আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্টও নিয়েছে।
আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর স্বামীর আত্নহত্যার প্রায় আড়াই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অপরাধী ও অভিযুক্তরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।এর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ভাবে তাঁকে ও তাঁরপরিবারকে চাপের মুখে রেখেছে।তিনি যেকোনো মুহূর্তে শারুন চৌধুরী গংয়ের দ্বারা জীবন ও সম্পদ হানির আশঙ্কা ও তুলে ধরেন।
ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, গত ৮ এপ্রিল তিনি চার জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরো ৭/৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।আসামীরা হলেন – চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিব ও যুবলীগনেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল।হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশাদুল আলম বাচচুগংদের নেতৃত্বে ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। তখন এনিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পুলিশের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছিল।কিন্তু তাতে সুফল আসেনি।
ইশরাত চৌধুরী দাবি করেন, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী আমার স্বামী মোরশেদ চৌধুরীকে একদিন ফোন করে রেডিসন হোটেলে দেখা করতে বলেন।আমার স্বামী তাতে আপত্তি করে বলেছিলেন অ্যাপনার সাথেতো আমার সরাসরি কোন ব্যবসায়িক লেন-দেন নাই তাহলে কেন দেখা করতে বলছেন। তখন শারুন চৌধুরী অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে আমার স্বামীকে হুমকি দিয়ে বলেন, লেন-দেন নাই এখন হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালের মে মাসে এই শারুন চৌধুরী আরোও ১০/১২ জন যুবককে সাথে করে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন।তাঁর বাসায় হামলা হয়েছিল শারুন চৌধুরীর নির্দেশেই মোর্শেদ চৌধুরীর সাথে শারুন চৌধুরীর সরাসরি কোন ব্যবসায়িক লেন-দেন না থকলেও পারভেজ ইকবাল ও জাবেদ ইকবালের মাধ্যমে শারুন চৌধুরী আমার স্বামীর সাথে ব্যবসায় অর্থবিনিয়োগ করে বলে তিনি শুনেছিলেন।শারুন চৌধুরী জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র হওয়ায়, তার ক্ষমতা ব্যবহার করে মোর্শেদ চৌধুরীকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।
ইশরাত জাহান চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, অভিযুক্তৱা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর পরিবার সহযোগিতা পায়নি।ছইপ পুত্রশারুনের ব্যবসায়িক পার্টনার পারভেজ-সাকিবগং ব্যবসায়িক কারণে কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয় মোর্শেদকে।এই ঋণের বিপরীতে মোর্শেদ তাদের লাভসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকাপরিশোধ করে।তারপরও চক্রটি এক পর্যায়ে জোরপূর্বক অলিখিত চেক ও স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেয়।আর এগুলোর ভয় দেখিয়ে তারা আরো টাকা দিতে চাপ ও নানা ভাবে হুমকি দেয় এবং ফ্লাটে হামলা চালায়।অব্যাহত চাপে অতিষ্ঠ হয়ে মোর্শেদ আমাদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে চাইলে খবরটি জানতে পেরে তারা পাসপোর্ট কেড়ে নেয়।ফলে একটু স্বস্তির সঙ্গে বাঁচার সব অবলম্বন হারিয়ে তিনি আত্বহত্যার পথ বেছে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন রাখেন, তাঁর স্বামী মোর্শেদ চৌধুরীর আত্নহত্যার নেপথ্যে থাকা হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে বাঁচাতেই কিআসামীদের ধরা হচ্ছে না? তিনি বিচারের দাবি নিয়ে এই কভিড মহামারির মধ্যে ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন।তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।