মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মোদীবিরোধী বিক্ষোভের নামে দেশে যা হয়েছে, তাতে তিনি উদ্বিগ্ন।
“বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে, এই স্বাধীনতা একটি সমষ্টিগত অর্জন। স্বাধীনতার সুবিধা এবং স্বাধীনতার আবেগ, অনুভূতি, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমি বাংলাদেশের সকল জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।“কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে আগে ও পরের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এহেন
পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মত মহান নেতৃত্বের শূন্যতা অনুভব করছি।” শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামে সঙ্কট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি বলেন, “হেফাজতে ইসলামে যোগ্য নেতৃত্বের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। গ্রুপিং, দলাদলি সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের অঙ্গনে ভিনদল ও ভিন মতাদর্শের মানুষ অনুপ্রবেশ করেছে এবং তারাই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে হেফাজতে ইসলামকে অত্যন্ত সুকৌশলে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে।
“এরই অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামকে তারা অনেকটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং ওই বিতর্কিত বহিরাগত সংগঠনের লোকজনই হেফাজতে ইসলামের নেতাদের অধিকাংশের মতামত উপেক্ষা করে হরতালের মত জনভোগান্তিকর কর্মসূচি পালনে বাধ্য করেছে।”
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আহমদ শফী, যার নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
মৃত্যুর আগের দিন মাদ্রাসায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে শফী মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন। তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানিকেও বহিষ্কার করা হয়। পরে ১৫ নভেম্বর শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের সম্মেলন হয়, তাতে আমির পদে আসেন জুনাইদ বাবুনগরী।
মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান নিজের পদত্যাগের ঘোষণায় বলেন, হেফাজতে ইসলাম এখন কিছু ব্যক্তির ‘নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। “বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমি হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর পদ থেকে ইস্তফা প্রদান করলাম। আমার ইস্তফা প্রদানে কে বেজার হল, কে খুশি হল- এটা আমার দেখার বিষয় নয়, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার হেফাজতে ইসলাম থেকে ইস্তফা প্রদান ইসলাম, দেশ ও জাতির অধীকতর কল্যাণের লক্ষ্যে।”
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান বলেন, এখন থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের দায়ভার তিনি বা তার দল বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন নেবে না। “বিগত কয়েকদিন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হওয়ায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছি। বাংলাদেশ সরকারসহ সর্বস্তরের জনগণকে উক্ত নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহবান জানাচ্ছি।”
কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ‘নিরীহ আলেম ওলামাদের’ হয়রানি না করার আহ্বান জানান ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি। সংগঠনের সহ সভাপতি আব্দুল বাতেন, মবিন উদ্দিন আহম্মদ, নওশী মিয়া, আব্দুল বাতেন নোমান, আবুল কাশেম চাকলাদার, মহাসচিব আ. রহমান খান ফরায়েজী, যুগ্ন-সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।