1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীর সিলেকশন গ্রেডের আশা

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন কর্মচারীকে সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা দিয়েছে সরকার। ২০১৫ সালের বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেকশন গ্রেড বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর থেকে সরকারি কর্মচারীদের অনেক দাবি সত্ত্বেও এ সুবিধা কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি অনেকটা ‘চুপিসারে’ সুপ্রিমকোর্টের ৪১ বেঞ্চ অফিসারকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া কর্মচারীও আছেন। ফলে সরকারি সব কর্মচারীর সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীর পদ আছে প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লাখ।

সিলেকশন গ্রেড হলো, নির্বাচিত সরকারি কর্মচারীদের শর্তসাপেক্ষে উচ্চতর স্কেল প্রদান। অর্থাৎ যারা দীর্ঘদিন সন্তোষজনকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু পদ না থাকায় পদোন্নতি পাচ্ছেন না-তাদের সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে চাকরিজীবনে আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিত করা হয়।

একটি রিট মামলার রায়ের ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্টের উল্লিখিত সংখ্যক কর্মচারীকে সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী আবেদনকারী চাকুরেদের সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

এর মাধ্যমে ১৫ লাখের বেশি সরকারি কর্মচারীর আশা তৈরি হয়েছে। সচিবালয়ে কাজ করা নিম্ন গ্রেডের চাকুরের একাধিক সংগঠন গত বেতন কাঠামো জারি হওয়ার পর থেকেই টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন তারাও উৎফুল্লতা প্রকাশ করছেন। অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ গত ৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত চিঠি সিএজি কার্যালয়ে পাঠালেও বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রয়েছে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, সুপ্রিমকোর্টের কর্মচারীদের মধ্যে যারা আইনি পদক্ষেপে ছিলেন শুধু তারাই এ সুবিধা পাবেন। এ বিষয়টি তুলে ধরে যদি অন্য কর্মচারীরা আইনি পথে যান তাহলে আদালত যে রায় দেন তাই হবে।

সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানী বলেন, আদালত কী সিদ্ধান্ত দেবেন আমার অবস্থান থেকে তা অগ্রিম মন্তব্য করতে পারি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, একই বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে পূর্বে যে সিদ্ধান্ত আসে পরবর্তী সময়ে অনুরূপ সিদ্ধান্ত আসে। এ সুযোগ পেতে হলে সংশ্লিদের আদালতে যেতে হবে।

সিলেকশন গ্রেড প্রত্যাশী একাধিক সরকারি চাকুরে জানান, গত বেতন কমিশন গঠনের পর অল্প কিছুদিনের জন্য যারা সিলেকশন গ্রেড পাননি তাদের কেউ কেউ আইনি লড়াই করছেন। সে অনুযায়ী আদালত নির্দেশ দিলে কিছু কর্মচারী এ সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু বেতন কমিশন গঠনের পর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৩০ জুনের পর চাকরিতে যোগ দিয়ে কেউ সিলেকশন গ্রেড পেলে সেই সুবিধা সব কর্মচারীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্টের যে ৪১ কর্মচারী সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তাদের মধ্যে সাতজনের নিয়োগ ২০১৭ সালে এবং পাঁচজনের নিয়োগ ২০১৬ সালে। সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে কার্যত সরকারি সব কর্মচারীর সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত অভিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদুল আলম খান বলেন, যারা সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা পেয়েছেন তাদের মতো একই মানদণ্ড ও সময় যারা পূর্ণ করেছেন তারা এ সুবিধা দাবি করতে পারবেন। সব কর্মচারী সেটা দাবি করতে পারবেন কিনা সেটা আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত ‘স্ট্যাটিসটিকস্ অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস্’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সরকারি চাকুরের পদসংখ্যা ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮। এর মধ্যে চাকরিরত আছেন ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন। এর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, সশস্ত্রবাহিনীসহ অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা আরও বেশি।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এনামুল হক বলেন, বেতন কমিশন ঘোষণার পর চাকরিতে যোগ দেওয়া কেউ যদি সিলেকশন গ্রেড পান তাহলে এ সুবিধা সব কর্মচারীকে দিতে হবে। একই সুবিধা কেউ পাবেন, কেউ পাবেন না- তা হতে পারে না।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন গঠিত সর্বশেষ বেতন কমিশন ‘পর্যায়ক্রমে’ টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড রহিত করতে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সরকার সরাসরি এসব সুবিধা একসঙ্গে বাতিল করে দেয়। এতে বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, শুধু সুপ্রিমকোর্ট নয়, বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচও বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। সেই হিসাবে বঞ্চিত সব কর্মচারী এ সুবিধা পেতে পারেন।

উদাহরণ দিয়ে সচিবালয়ে কর্মচারীদের একটি সংগঠনের সভাপতি বলেন, সর্বশেষ বেতন কমিশন কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১ জুলাই। একই বছরে বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন হয় ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচকে ওই বছরের ২ জুলাই সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে সরকার প্রথমেই বেতন কমিশনের নিয়ম ভেঙেছে। তাই ঊর্ধ্বতন গ্রেডের কর্মচারীরা এ সুবিধা পেলে নিম্নতম গ্রেডের কর্মচারীরা সেটা কেন পাবেন না?

এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বিগত বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন ১৫ ডিসেম্বর হওয়ায় এর আগে দেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্তের জন্য সরকার বাধ্য থাকবে না বলে অবস্থান নেওয়া হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন যেদিন থেকেই জারি হোক, বেতন স্কেল যেদিন থেকে কার্যকর হবে সেই দিন থেকে বিগত বেতন স্কেলের সব সুবিধা রহিত হয়ে যাবে। আর এ বিষয়টি সামনে রেখেই নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা বেতন স্কেল কার্যকরের পর থেকেই টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। মাঝে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে তাদের কার্যক্রম স্তিমিত ছিল। এখন নতুন করে দাবি আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সচিবালয় ও সচিবালয়ের বাইরের সংগঠনগুলো।

সচিবালয় কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাপ মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে এলেও অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের যৌক্তিক দাবিকে আমলে নিচ্ছে না। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের কিছু কর্মচারী সিলেকশন গ্রেডের সুবিধা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দাবি যে যৌক্তিক তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করি সরকার এ বিষয়টি আমলে নেবে। আর যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে রায় পর্যালোচনা করে আমরাও অধিকার আদায়ে আদালতে যাব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি