মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি ১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আলবার্তো ফুজিমোরিকে ১৯৯০-এর দশকে তার দশক-দীর্ঘ শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত ২০১৭ সালে তাকে ক্ষমা করে মুক্তির আদেশ দেন। আদালতের অনুমতির পর স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি ছাড়া পান। ফুজিমোরি ২০০৭ সালে চিলি থেকে প্রত্যর্পণের পর ১৬ বছর কারাগারে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
আন্তঃআমেরিকান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস (আন্তঃ-আমেরিকান আদালত) এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সমালোচনা সত্ত্বেও আদালত মানবিক ভিত্তিতে ক্ষমা পুনরুদ্ধারের রায় দেওয়ার একদিন পর বুধবার ৮৫ বছর বয়সী ফুজিমোরিকে লিমার বারবাডিলো কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
৮৫ বছর বয়সী ফুজিমোরি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর একটি গাড়িতে উঠছেন। এ সময় সেখানে তাঁর সমর্থকদের ভিড় ছিল। কারাগার প্রাঙ্গণ ছেড়ে যাওয়ার সময় সেখানে সাংবাদিকেরা ভিড় করেন।
তার মুক্তির দিনে জেলের বাইরে সমর্থকরা জড়ো হয়েছিল। কারাগার থেকে বের হয়ে একটি গাড়িতে উঠেন। এ সময় ফুজিমোরিকে তার দুই সন্তান এবং একজন ব্যবসায়ী কেনজি অভ্যর্থনা জানান।
কারাগারের বাইরে অপেক্ষারত ফুজিমোরি সমর্থক ক্যাটালিনা পন্স দিনের শুরুতে বলেন, ফুজিমোরির বিরুদ্ধে এই অবিচারের অবসান হওয়ার সময় এসেছে। আমাদের দেশ তার পায়ে দাঁড়িয়েছে।
ফুজিমোরি জাপানি ঐতিহ্যের অধিকারী এবং ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, তিনি পেরুকে শাইনিং পাথ সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অর্থনৈতিক পতন থেকে রক্ষা করেছিলেন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, তিনি গণতন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন এবং শাইনিং পাথের বিরুদ্ধে তার সরকারের যুদ্ধের সময় নৃশংসতা করেছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতিকে ২০০৯ সালে ১৯৯১ এবং১৯৯২ সালে ২৫ জনকে হত্যার আদেশ দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি পেদ্রো পাবলো কুজিনস্কি ২০১৭ সালে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
এই সপ্তাহের সাংবিধানিক আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্তঃআমেরিকান আদালত এবং ভুক্তভোগী পরিবারের চাপের পর নিম্ন আদালত কর্তৃক ক্ষমা বারবার বাতিল বা স্থগিত করা করে।
আদেশের পর আন্তঃ-আমেরিকান আদালতের সভাপতি পেরুকে শর্ত পূরণ করা হয়েছে কিনা তা বিশ্লেষণ করার জন্য “সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান” না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষমা বন্ধ করতে বলেছিলেন।
২০০০ সালের নভেম্বরে ফুজিমোরিকে “নৈতিক অক্ষমতার” কারণে অভিশংসন করা হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তার একদিন পর তিনি জাপানে পালিয়ে যান, যেখানে তার বাবা-মা ছিলেন, এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি চিলিতে যান, সেখান থেকে তাকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যর্পণ করা হয়।
সম্প্রতি তিনি শ্বাসযন্ত্র, স্নায়বিক এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এবং জিহ্বার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষমা পুনঃস্থাপনের মঙ্গলবারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত।