তারপর অনেক যুগ পার হয়ে গেলো, প্রথম শিল্প বিপ্লব আবিষ্কার হয় লোহার মাধ্যমে। এই শিল্প বিপ্লব সৃষ্টি করলো নতুন অনেক পেশা। তবে একইসঙ্গে হারিয়ে গেলো পুরনো অনেক পেশা। আগে যারা হাত দিয়ে কাজ করতো, তাদের এখন হটিয়ে দিয়ে সেই জায়গা দখল করে নিলো মেশিন। তারপর একে একে আরো দুইটি শিল্প বিপ্লব ঘটে গেলো। আমরা এই মুহূর্তে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের থেকে খুব বেশি হলে এক দশক দূরে আছি। আশা করা যায়, এই শিল্প বিপ্লব ও পৃথিবীর চাকরিক্ষেত্র ও ইন্ডাস্ট্রিতে আমূল রদবদল আনবে।
অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে দু’টি জিনিস। একটি জেনেটিক্স এবং অন্যটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ.আই)। সুতরাং ২০৩০ সালের পেশাগুলো মূলত জেনেটিক্স আর এ.আই কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে।
হিউম্যান-মেশিন টিমিং ম্যানেজার
যন্ত্র-মানবদের হাতে চলে যাবে এক দশক পর প্রধান প্রধান ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গুলো এক দশক পর। তবে শুরুতেই সব দায়িত্ব রোবটদের হাতে চলে যাবে না। তাই শুরুতে প্রোডাকশন গুলো হিউম্যান-মেশিন কম্বিনেশনে হবে। আর এই জটিল কাজকে সম্ভব করার জন্য প্রয়োজন হবে একজন দক্ষ সমন্বয়ক। তার অন্য নাম হিউম্যান-মেশিন টিমিং ম্যানেজার, যার কমিউনিকেশন স্কিলে খুবই দক্ষতাসম্পন্ন হতে হবে।
সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ির মেকানিক
এলোন মাস্কের টেসলা কোম্পানি ইতোমধ্যেই সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছে। তবে টেসলা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি। যেহেতু সেলফ-ড্রাইভিং নতুন প্রযুক্তির গাড়ি, এটা গঠনগত দিক দিয়ে সাধারণ গাড়ির থেকে আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই গাড়ির মেরামত সাধারণ গাড়ির মেকানিক দিয়ে সম্ভব হবে না। তাই সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ির জন্য প্রয়োজন হবে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন মেকানিক।
কৃত্রিম অঙ্গ নির্মাতা
আমাদের পৃথিবীতে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার কৃত্রিম অঙ্গের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে স্টেম সেল নিয়ে প্রচুর হারে গবেষণা হচ্ছে বলে কৃত্রিম অঙ্গের ডেভেলপমেন্ট এর কাজ খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হয় কৃত্রিম অঙ্গের ইন্ডাস্ট্রি হবে ভবিষ্যত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রি।
ড্রোন ট্রাফিক অপটিমাইজার
বর্তমানে ড্রোন এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এখন ড্রোন শুধু ফিল্ম মেকিং এ ব্যবহৃত হলেও, ভবিষ্যতে ফুড ডেলিভারি, ট্রাফিক পুলিশিং, সিকিউরিটি কন্ট্রোলিং, মানুষের হয়ে ব্যাটেল ফাইটিং, এছাড়া আরও বহুল কাজে ড্রোন ব্যবহৃত হবে। তাই ড্রোন এর আধিক্যের ফলে, এর দ্বারা সম্ভাব্য সৃষ্ট দুর্ঘটনা এড়াতে একদল দক্ষ প্রফেশনাল কে নিযুক্ত করা হবে এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রনের জন্য। এদের আরেক নাম হবে ড্রোন ট্রাফিক অপটিমাইজার।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি জার্নি বিল্ডার
আমেরিকান টিভি সিরিজ ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড দেখেনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড এর মতোই অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ভবিষ্যতে ডিজাইন করা হবে। ধরুন আপনি থাকেন বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে, কিন্তু আপনার বহু দিনের সাধ আপনি মিশরের পিরামিড দেখবেন। অগমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে আপনার এলাকাতে থেকেই তা দেখা সম্ভব হবে। আর মুহূর্তের মধ্যেই আপনি চাইলে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের অগমেন্টেড রিয়েলিটি। ভবিষ্যতের ট্যুরিজম সেক্টরের সিংহভাগ দখল করবে এই অগমেন্টেড রিয়েলিটি। আর এই অগমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে বিভিন্ন লোকেশন যে ডিজাইন করবে ভবিষ্যতে তার চাহিদা হবে আকাশচুম্বী।
গার্বেজ ডিজাইনার
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই পৃথিবীর খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি উৎপাদনও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ট্র্যাশ বা গার্বেজ। ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হলো গার্বেজ ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে সিস্টেমেটিক উপায়ে গার্বেজ ডিসপোজ করা এবং গার্বেজ কে অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানে তৈরি করার চাহিদা হবে আকাশচুম্বী। তাই ট্র্যাশ ইঞ্জিনিয়ার বা গার্বেজ ডিজাইনারদের পেশা হবে সমাজের জন্য অপরিহার্য।
বায়োফিল্ম ইন্সটলার
বায়োফিল্ম হলো একগুচ্ছ মাইক্রোবস, যারা সাধারণত সংক্রামক। তবে এদেরকে কাজে লাগিয়ে অনেক সূক্ষ্ম কাজ সম্পাদন করা যায় যা সাধারণ ভাবে সম্ভব ছিলনা। যেমন: নর্দমার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, অয়েল স্পিল রিকভার করা, ইত্যাদি। এই মাইক্রোবস গুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গার্বেজ প্রসেস করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে।