নিউজ ডেস্ক : ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে পরামর্শকের জন্য ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে বিদেশ সফরের আয়োজন এবং ১২টি গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থাও। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘স্টাডি ফর প্রিপারেশন অব ঢাকা নর্থ নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টে (ডিএনএনইউপি)’ ঘটেছে এমন ঘটনা।
তবে এই পরিমাণ পরামর্শক ব্যয় এবং এত সংখ্যক গাড়ির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। শিগগিরই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। জানা গেছে, সভায় এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এলাকাগুলো নির্বাচিত করা হবে। তাছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য অঙ্গসমুহ চিহ্নিতকরণ, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিহ্নিত প্রকল্প এলাকার ড্রয়িং, ডিজাইন, প্রাক্কলন, বিভিন্ন দলিলাদির বিষয়গুলোর সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে উত্তর সিটি করপোরেশনের এলাকার জন্য পরিবেশগত ও সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ২৩ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে-এই সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক হিসেবে পাঁচটি ফার্ম ও ১৫ জন ব্যক্তিগত পরামর্শক দেশীয় ১০ জন আর বিদেশি পাঁচ জন নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই ব্যয় অত্যাধিক বলে বলে মনে হয়। সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় একটি কম্প্রিহেনসিভ স্টাডি সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে একটি বা দুটি ফার্মের মাধ্যমে স্টাডি সম্পন্ন করা যেতে পারে। এত অধিক সংখ্যক পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা ও ব্যয় নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য সিটি করপোরেশনের বড় আকারের প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কন্সালটেন্সির (পরামর্শক) সংস্থান বাদ দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে সিটিজেন এনগেইজমেন্ট স্পেশালিস্টের প্রস্তাবও বাদ দেওয়া যেতে পারে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য সম্প্রতি বড় আকারের একটি বিনিয়োগ প্রকল্প পিইসি সভায় সুপারিশ করা হয়েছে। তাই ওই প্রকল্পের সঙ্গে এ প্রকল্পের কার্যক্রম কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে বিষয়ে প্রকল্প দলিলে থাকা দরকার। প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে দুই জন আইসিটি (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক) এবং দুজন রেভিনিউ জেনারেশন এক্সপার্ট (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক) নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এক জন করে বাদ দিয়ে একজন করে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় যেসব ফার্ম নিয়োগের কথা বলা হয়েছে তাদের টিওআর, যোগ্যতা ইত্যাদি প্রকল্প দলিলে উল্লেখ করতে হবে। প্রকল্প দলিলের ১৭ নং পৃষ্ঠায় ফার্ম নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ডিটেইল ডিজাইন অব দ্য টেন পারসেন্ট প্রজেক্ট অ্যামাউন্ট অব মানি’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা পিইসি সভায় জানা যেতে পারে। প্রকল্প প্রস্তাবের ২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটির অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট সমীক্ষা দলিলে সংযুক্ত করা হয়নি। পুনঃগঠিত প্রকল্প প্রস্তাবে তা যুক্ত করতে হবে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সমীক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। যার মধ্যে ডিএনসিসির নিজস্ব ব্যয় ১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিলের এই ব্যয় কর্মকর্তা ও স্টাফদের বেতন বাবদ ব্যয় করার জন্য সমীক্ষা দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সংগতিপূর্ণ নয়। প্রকল্প প্রস্তাবের ১৮ পৃষ্ঠায় প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে সব কর্মকর্তা বা স্টাফদের উল্লেখ করা হয়েছে তারা সিটি করপোরেশনের বেতনভুক্ত কর্মচারী। তাই প্রকল্প থেকে বেতন ভাতা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বাবদ টাকা বাদ দিয়ে তা অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যেতে পারে।
গাড়ি ভাড়ার বিষয়ে প্রকল্প কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় দুটি মাইক্রোবাস বাবদ ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, দুটি জিপ বাবদ ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা, আটটি কারের জন্য ৪৮ লাখ টাকা ভাড়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। কিন্তু সমীক্ষা প্রকল্পের জন্য এত অধিক সংখ্যক যানবাহনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয় না। আলোচনার মাধ্যমে গাড়ির সংখ্যা ও ব্যয় হ্রাস করা যেতে পারে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত অফিস ইক্যুইপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় ১৫টি কম্পিউটার পেরিফেরাল, চারটি ল্যাপটপ, তিনটি স্ক্যানার, ২২টি মোবাইল ফোন, ৩১টি লেজার প্রিন্টার, দুটি টিভি স্কিন, দুটি কালার ফটো কপি মেশিন। ওয়াইফাইসহ অন্যান্য অফিস ইক্যুপমেন্ট বাবদ ৫৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় এত অধিক সংখ্যক অফিস ইক্যুপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
ফার্নিচার কেনার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সমীক্ষা প্রকল্পটির আওতায় ২১টি এক্সিকিউটিভ টেবিল, ছয়টি কাঠের সেক্রেটারিয়েট টেবিল, সাতটি ইউটিলিটি টেবিল, ২৭টি চেয়ার, ৬৮টি ভিজিটিং চেয়ার, দুই সেট সোফা, সাতটি বুকসেলফ, ৩৬টি স্টিল ফাইল কেবিনেট, ১৭টি আলমিরা, একটি কনফারেন্স টেবিল ও সাতটি চেয়ারবাবদ ৪৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে এই খাতে ফার্নিচারের সংখ্যা ও ব্যয় হ্রাস করা যেতে পারে।
কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বিষয়ে পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সমীক্ষা প্রকল্পটিতে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৩৫ লাখ টাকা এবং স্থানীয় সেমিনার ও কর্মশালা বাবদ ২৮ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশিক্ষণ কাদেরকে এবং কতদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা প্রকল্প দলিলে উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া সমীক্ষা প্রকল্পে প্রশিক্ষণের বিষয়টি বাদ দেওয়া যেতে পারে।