করোনা সংকট কাটিয়ে চাঙা মেজাজে ফিরেছে শেয়ারবাজার। বাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কয়েক গুণ বেড়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হার ২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০০ কোটি টাকার নিচে। এর প্রভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসায় সব শেয়ারের দর বাড়ছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে বাজারের উত্থান ধরে রাখতে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বিনিয়োগকারীরা ৩১ হাজার ৪৩৯ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূলধন ফিরে পেয়েছেন। গত বছরের একই সময় ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। করোনা সংকটের কারণে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। পরে বাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। জুলাইয়ের পর লেনদেন শুরু হলেও ডিসেম্বরের শুরুতে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়, যা চলতি বছর চাঙা হয়ে ওঠে। বিদায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিনে ডিএসই ৯ হাজার ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯২১ টাকার লেনদেন হয়েছে। এই সময় ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩৮৪ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮৭.৫৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯০৯.৩১ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৬৪টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১৬৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৫০টির। ডিএসইতে সপ্তাহের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে রবি আজিয়াটা কোম্পানির শেয়ারের। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ারদর ৪২ শতাংশ বেড়ে ৭০ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৮৭ টাকা ৪০ পয়সা হয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪৪১ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৬ টাকার। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৭৬.১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২২৫.১৬ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২৭টির দর বেড়েছে, ১৪৬টির কমেছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫১টির দর। জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার আস্থা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ওপর আস্থা নষ্ট হলে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সূচক ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার পয়েন্টে পৌঁছেছে। বৃদ্ধির হার প্রায় ৪০ শতাংশ। আমাদের অর্থনীতি কি ৪০ শতাংশ বেড়েছে? বাড়েনি। তাহলে কারা বাজারে এত দ্রুত বিনিয়োগ করল। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না হলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে না। সে জন্য এসব সিন্ডিকেটগুলোর ওপর নজরদারি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারের এই গতি ধরে রাখতে হলে সরকারি, বহুজাতিক ও বড় মূলধনী কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে।’