পঙ্কজ বিশ্বাস কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি : বাসার টেলিভিশনে, মোবাইলে দেখি বিভিন্ন স্কুলের মেয়েরা ফুটবল খেলায়, ক্রিকেট খেলায়। আমাদের খেলার জায়গা নাই, খেলবো কেমনে।’ টিফিন হইলে ক্লাসে বসি থাকি। অপেক্ষারত ও ভারাক্রান্ত কন্ঠে ডেইলি অবজারভার সংবাদদাতাকে কথাগুলো বলছিলো অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ঐশী (১৩+)।
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার শৌলদহ মুশুরীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় কাটাচ্ছে ক্লাস রুমে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারান্দায়, বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল পার্শবর্তী রাস্তায়। যা খুবই ভয়াবহ। আর এটাই তাদের খেলা। টিফিনের সময় তাদের এভাবেই কেটে যায়। কারণ, তাদের স্কুলে নেই নিজস্ব কোন খেলার মাঠ। মাঠ না থাকায় তাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হয় না। টিফিনের ছুটি ভবনের চার দেয়ালের ভেতরেই কাটাতে হয়।
মূলত, খেলার মাঠ ছাড়া একটি বিদ্যালয় কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। তাই খেলার মাঠ ছাড়া কোনো বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন নয়। আর যেসব অনুমোদিত বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় খেলার মাঠ স্থাপন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শৌলদহ মুশুরীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীবৃন্দ ডেইলি অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষের তুলনায় বাইরের শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। খেলতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, সামাজিকীকরণ হয়। খেলার মাঠ না থাকায় কোমলমতি শিশুরা খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য বিদ্যালয়ে একটি খেলার মাঠের জোর দাবি জানাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল রায় ডেইলি অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশও এই খেলাধুলা। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা চর্চা থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। ০১-০১-১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের নিজস্বভাবে নেই কোনো খেলার মাঠ। ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা করতে পারছে না। আমাদের বিদ্যালয়ের আওতাধীন জমির পরিমাণ দৈর্ঘ-২৬০ ফুট, প্রস্থ-১২০ ফুট, গভীরতা-২০ ফুট। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষার্থীরা চিত্তবিনোদনে মন বিকশিত ও পড়াশুনোয় আগ্রহী হত। তাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ তৈরীতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সিদ্দিকী নূর আলম ডেইলি অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ না ঘটলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। যেহেতু বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ তৈরি করার মত যায়গা রয়েছে, তাই অতিদ্রুত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা করার জন্য মাঠের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।