আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে এশিয়ার অর্থনীতিতেও। মঙ্গলবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, গত ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ছে এশিয়া।
এডিবি বলছে, করোনাভাইরাস মহামারি এশীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে মন্দার মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রায় ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৪৫ দেশের উন্নয়নশীল এশিয়ায় আঞ্চলিক মন্দা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরে উন্নয়নশীল এই অঞ্চলের অর্থনীতি ০ দশমিক ৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে বলে জানিয়েছে এডিবি। তবে ২০২১ সালে এশিয়ার অর্থনীতি দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। ওই বছর এশিয়ার অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
এডিবির আউটলুক আপডেটে চলতি বছর এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে এই অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ০.১% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে এডিবি।
এক বিবৃতিতে এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুইয়ুকি সাওয়াদা বলেছেন, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চলতি বছরের বাকি সময়ে কঠিন হতে পারে।
এডিবির এই মূল্যায়ন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ চলতি বছরের শুরুর দিকে এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বছর ভারতের অর্থনীতি ৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কোচন দেখছে। দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজির অর্থনীতি চলতি বছর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একইভাবে মালদ্বীপের অর্থনীতির সঙ্কোচন ঘটতে পারে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে এডিবি বলছে, আশার খবর হলো- আগামী বছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একই বছর চীনের অর্থনীতিতে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
কিন্তু মহামারি দীর্ঘায়িত এবং সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে এশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টা পথচ্যুত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আঞ্চলিক এই ব্যাংক।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুইয়ুকি সাওয়াদা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক হুমকি এখনও জোরাল রয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের প্রাদুর্ভাব সম্প্রসারিত হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হতে পারে।