২০২২ সালের শুরুতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ চাঙ্গা। বছরের প্রথম সপ্তাহের মতো দ্বিতীয় সপ্তাহেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় উত্থান হয়েছে। এতে ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর অর্থাৎ প্রায় ৭ বছর তিন মাস পর সর্বোচ্চ দামে উঠে এসেছে জ্বালানি তেল।
গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল দাম বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। আর হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের ওপরে।
বছরের প্রথম সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে প্রায় ৫ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ে ৫ শতাংশের ওপরে। হিটিং অয়েলের দাম বাড়ে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে চলতি বছরের প্রথম দুই সপ্তাহেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল দাম ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং হিটিং অয়েলের দাম ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এরআগে গত বছরের অক্টোবরের শেষদিকে এসে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। যার প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় সরকার। ওইদিন রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ তেলের দাম সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারমূল্য লিটারপ্রতি ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপি ছিল। বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৪১ টাকা কম।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক শূন্য ১ টাকা কমে বিক্রি করছে। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে লিটারপ্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি। অক্টোবরে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রলিয়াম পণ্য বর্তমান দামে সরবরাহ করায় বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৭৮ দশমিক ৯৩ ডলারে উঠে আসে। বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ২৬ ডলারে। এতে এক মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর এখন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সর্বোচ্চ দামে অবস্থান করছে।
অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলও নতুন বছরের প্রথম দুই সপ্তাহ টানা বেড়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৮১ দশমিক ৭৬ ডলারে উঠে আসে। গেল এক সপ্তাহে বা বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ৪৭ ডলার। এতে মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে গেল এক সপ্তাহে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েলের দাম ২ দশমিক ৬৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে হিটিং অয়েলের দাম বাড়ে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এতে মাসের ব্যবধানে হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর হিটিং অয়েলের দাম এখন সর্বোচ্চ।
এর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে তেল। সেদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়।