চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের জুনে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার এসেছিল। এরপর গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করেনি। সর্বশেষ সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে দেশে আবারও ২শ কোটির ঘর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর আগের মাস ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ৬ শতাংশ।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংগ্রহের নির্ধারিত দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা নমনীয়তার কারণে রেমিট্যান্স কিছুটা বেড়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও কিছুটা বাড়ছে বলে আশা করছেন তারা। রেমিট্যান্সপ্রবাহে এই বৃদ্ধির পেছনে অনুকূল বিনিময় হারের কথা উল্লেখ করেছেন ব্যাংকাররা।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশ (বাফেদা)-এর বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। সে হিসেবে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১২ টাকা পর্যন্ত দিতে পারে। তবে বাফেদা ও এবিবির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া ডলারের এই দাম অনেক ব্যাংকই মানছে না। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি সময়ে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নিয়ে ব্যাংকগুলোকে খুব বেশি চাপ দেওয়ার ফলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যায়। এরপর থেকে এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা নমনীয় রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স কিনলেও এখন আর তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদিও গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি অফার করায় ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ওই মাসে রেমিট্যান্স অনেক কম এসেছিল। ওই ঘটনার পর থেকে ব্যাংকগুলোকে নানা সময়ে সতর্ক করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা নমনীয় আচরণ করছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশকিছু ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি দেওয়ার কারণে ডলারও বেশি পাচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক বাফেদা নির্ধারিত দাম মেনে চলায় তাদের রেমিট্যান্স আয় কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ভালো থাকায় চলতি অর্থবছরের সাত মাসে মোট রেমিট্যান্সপ্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ২৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। সেই হিসাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
এদিকে, রেমিট্যান্স বাড়লেও রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। গত বুধবার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগের দিন মঙ্গলবার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে ছিল। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়নের ওপর উঠেছিল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমেছে।
তবে দেশের বাইরে শ্রমিক যাওয়ার তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে কম। ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখের বেশি শ্রমিক দেশের বাইরে যান। গত বছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৬৩ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এ পরিমাণ অবশ্য ২০২১ সালের তুলনায় কম। মূলত হুন্ডিতে ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে আশানুরূপ হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না।