১ লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশের ওপর কর মওকুফ চায় বিএসইসি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। একই সঙ্গে তিনি এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত লভ্যাংশের ওপর কর মওকুফ ও এর বেশি টাকার ওপর ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করে সেটাকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি দিকনির্দেশনার বিষয়ও গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনার মধ্যে পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি ও নেতৃত্বস্থানীয় দেশীয় ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়েরও উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া উক্ত নির্দেশনায় পুঁজিবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। নির্দেশনায় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অনিয়মের ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ ছিল। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, পুঁজিবাজারকে আগামী দিনের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভূমিকা পালনে সরকারের নীতি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার পুঁজিবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার করপোরেট করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। যার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি করপোরেট করহারে ছাড় পাবে। এটি দেশি-বিদেশি লাভজনক ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহী করবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে আরেকটি ইতিবাচক খবর রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে কর্মরত ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ হতে শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট ও লেনদেনের স্বল্প ভলিউম পরিলক্ষিত হচ্ছে; এই করছাড়ের ফলে আগামী দিনে পুঁজিবাজারের লেনদেন বাড়বে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে কর্মরত মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। আগে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। এখন যা ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করতে উৎসাহ পাবে। পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন মার্চেন্ট ব্যাংক। পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোয় মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সরকারের উদ্যোগের ফলে গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত মূলধনী মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) ওপর করহার কমানো হয়েছিল। এ সময় অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নের বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক ও আন্তরিক।

বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের কল্যাণ ও সুরক্ষার্থে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের ওপর ধার্য করা বার্ষিক মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস করে ১৫০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সমন্বিত গ্রাহক হিসাব হতে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ইনেভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি উপকৃত হবেন। বাজেট প্রস্তাব সম্পর্কে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি বিবেচনায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত ডিভিডেন্ডের (লভ্যাংশ) ওপর ট্যাক্স মওকুফ করা এবং এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে অর্জিত ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করে সেটাকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি বাজেটে পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ রইল।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০