Print Date & Time : 10 June 2025 Tuesday 12:25 am

‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবে সমবেত হওয়া লাখ লাখ মুসলমান তাঁবুনগরী মিনা থেকে সাতসকালে হাজির হচ্ছেন আরাফাত ময়দানে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে তাদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিদায় হজের স্মৃতি বিজড়িত এই ময়দান। বৃহস্পতিবার সেখানে তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজের খুতবা শুনবেন এবং জুমা ও আসরের নামাজ পড়বেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেবেন মসজিদ আল-হারামের খতিব শেখ সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ। ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে মসজিদ আল-নামিরায় খুতবা পাঠ এবং নামাজ আদায়ে ইমামতির দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

এ খুতবা ২০টির বেশি ভাষায় রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়। এই ২০ ভাষার মধ্যে বাংলাও রয়েছে। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন জোহর ও আসরের নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে একসঙ্গে পড়েন হাজিরা। সেখানে আরাফাতের ময়দানের একপ্রান্তে মসজিদে নামিরাতে হজের খুতবা দেন একজন ইমাম। পরদিন কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন হবে। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, বৃহস্পতিবার আরাফাত ময়দানে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নিয়মিত আবহাওয়াবার্তা অনুসরণ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

অতিরিক্ত গরম ও সানস্ট্রোক মোকাবিলায় নির্দিষ্ট পরিবহনে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৯ জিলহজ) জোহরের আগে থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত পুরো সময় আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। এরপর হাজিরা মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে হাজিরা মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন এবং মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করবেন, থাকবেন খোলা আকাশের নিচে।

সেখানে সারারাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন হাজিরা। মুখে থাকে তাকবির ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’…শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হয় মুজদালিফায় অবস্থানের সময়, রাতে কিংবা সকালে। হজের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে তিনবার জামরাতে সাতটি করে কঙ্কর বা পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। বড় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনায় কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যারা সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি সম্পন্ন করেন, তারা এসএমএসের মাধ্যমে কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার বার্তা পান।

কোরবানির পরপরই মাথা মুণ্ডন সেরে ফেলতে হয়। এরপর সাধারণ কাপড় পরে কাবাঘর প্রদক্ষিণ করা যায়। মহানবী (সা.) জোহরের নামাজ পড়েছিলেন মসজিদে হারামে। কাবাঘর প্রদক্ষিণ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়ে হাজিরা চলে যান সাফা-মারওয়া মধ্যে সাতবার ছুটোছুটি করতে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে জমজমের পানি পান করতে বলা হয়। ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে প্রতিদিন।

তবে যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফ করেন, তাহলে তাকে তাওয়াফের পর আবার মিনায় চলে আসতে হবে এবং রাতে মিনায় অবস্থান করতে হবে। নারী, বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বলদের কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে রাতের সময়কে বেছে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে এখন হজ কর্তৃপক্ষ সময়সূচি ঠিক করে দেয় এবং বাংলায় দিক নির্দেশনার ব্যবস্থা আছে। সেই সময় অনুযায়ী কঙ্কর নিক্ষেপ করা হলে ভিড় এড়ানো সম্ভব। ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় রাত্রযাপন করতে হয়। কেউ মিনাত্যাগ করতে চাইলে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগেই চলে যেতে হবে।

এ সময়ের মধ্যে মিনাত্যাগ করতে না পারলে ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করতে হবে। সেদিন সাতটি করে আরও ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। মক্কা ছেড়ে দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করতে হয়, যাকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়। এবার সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন; আর শেষ হবে ১০ জুলাই।