আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গ্রাম সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। অসাধারণ শিক্ষাগত অর্জনের জন্য গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পিএইচডি ভিলেজ’ নামে। কারণ, এখানকার অন্তত ৩৩ জন তরুণ-তরুণী ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
পাহাড়ি এই ছোট্ট গ্রামটির নাম পেংদাও। ফুজিয়ান প্রদেশের নানন শহরের এই গ্রামটি দেশব্যাপী সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে আগস্ট মাসের শেষ দিকে এক বর্ণাঢ্য বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গ্রামটির ইতিহাসে এমন আয়োজন দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো। এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক ছিল ‘গুও ফ্যামিলি এডুকেশন ফান্ড’।
মজার ব্যাপার হলো- গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ‘গুও’ পদবিধারী।
এবারের বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে চীনের খ্যাতনামা সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী আছেন। এছাড়া আছেন ১৫ জন মাস্টার্স ডিগ্রি শুরু করতে যাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থী এবং ৪৬ জন আছেন এমন যারা সেপ্টেম্বর থেকে স্নাতকে ভর্তি হবেন।
অনুষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থী লাল রঙের ফিতা পরে আসেন। সেই ফিতায় চীনা অক্ষরে লেখা ছিল ‘উ জু ঝি গুয়াং’, যার অর্থ ‘আমাদের বংশের গৌরব’ । পরে তারা হাতে ধূপকাঠি নিয়ে পূর্বপুরুষদের স্মৃতিস্তম্ভে নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অনুষ্ঠানে মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ইউয়ান (প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
পেংদাও গ্রামের ৩৩ জন শিক্ষার্থী এ পর্যন্ত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
গ্রামটির প্রধান ভবনে তাদের নাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখা লাল রঙের কাপড়ের ফিতা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
অল্প আবাদি জমির প্রায় ৬ হাজার মানুষের এই পাহাড়ি গ্রামটি একসময় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছে। আর এই বিষয়টিই শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে প্রেরণা দিয়েছে স্থানীয়দের।
গুও ফ্যামিলি এডুকেশন ফান্ডের পরিচালক গুও দংইউ বলেন, ‘আমাদের গ্রামে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ অনেক পুরনো। বাবা-মায়েরা ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের পড়াশোনার ওপর জোর দেন। আমাদের এই বৃত্তির লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের দেশ ও গ্রাম প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা, মানবিক কাজে অংশ নেওয়া এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া।’
চীনের গ্রামীণ এলাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মানিত করতে প্রায়ই এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন হয়ে থাকে। যেমন, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটির ঝেজিয়াং প্রদেশের এক শিক্ষার্থী বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর তার পরিবার মহাসমারোহে অনুষ্ঠান করে। পরিবারটির একশো বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন সাফল্য পেয়েছিল সেই শিক্ষার্থী।
ফুজিয়ানের ‘পিএইচডি ভিলেজ’ ইতোমধ্যেই চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘অনেকে এটিকে সৌভাগ্য বলে মনে করতে পারে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটি এক ধরনের ইতিবাচক পরিবেশের ফল, যেখানে সবাই সাফল্যের জন্য চেষ্টা করে।’
অন্য একজন লিখেছেন, ‘কী অসাধারণ একটি জায়গা! সুযোগ হলে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে এখানে যেতে চাই।’
Add Comment