নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এইচ বি এম (হেফজুল বারি মোহাম্মদ) ইকবালের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক)। পৃথক মামলায় আসামি হচ্ছেন তার ছেলে ইমরান ইকবালও। আর এইচ বি ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও অন্য ছেলে মঈন উদ্দিন ইকবালকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেয়া হয়েছে। ইকবালের ওই দুই ছেলেও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
বৃহস্পতিবার( ১০ অক্টোবর) পৃথক প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় দুটি মামলার অনুমোদন ও ২৬(১) ধারায় দুটি সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করেছে কমিশন।
দুদকের অভিযোগ, ডা. এইচ বি এম ইকবালের নামে বিভিন্ন খাতে ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৯ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেলেও ১৯০ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৬২ টাকার আয় প্রদর্শন করেছেন তিনি। ওই আয়ের বিপরীতে তার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় পাওয়া যায় ৯৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮২ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রেখেছেন। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় একটি মামলা করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ডা. ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর নামে ১০ কোটি ৮২ লাখ ২২ হাজার ৮৬৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৩ টাকা এবং তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৮০৫ টাকা। ওই ব্যয় বাদে তার নিট আয়/সঞ্চয় থাকার কথা ১০ কোটি ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮৮ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৮ টাকা মূল্যের সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে দুদক। তাই আঞ্জুমান আরা শিল্পীর বিরুদ্ধে অর্জিত প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ, সম্পদ অর্জনের উৎস এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ উদ্ঘাটনে তাকে আইনের ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করেছে দুদক।
দুদক বলছে, ইকবালের বড় ছেলে ইমরান ইকবালের নামে ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৩৯৭ টাকা মূল্যের অর্জিত সম্পদ পাওয়া গেছে। অথচ বিভিন্ন খাতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯১০ টাকা এবং তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫০ টাকা। ওই ব্যয় বাদে তার নিট আয়/সঞ্চয় থাকার কথা ৪০ কোটি ৭০ লাখ ৯৬০ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ৫ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ৪৩৭ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রেখেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অপরাধে আইনের ২৭(১) ধারায় পৃথক আরও একটি মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এদিকে ইকবালের অন্য ছেলে মঈন ইকবালের নামে ৪৭ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৮৭ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৫৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৯ টাকা। ওই ব্যয় বাদে তার নিট আয়/সঞ্চয় থাকার কথা ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৫ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪২০ টাকা মূল্যের সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে দুদক। তাই মঈন ইকবালের বিরুদ্ধে অর্জিত প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ, সম্পদ অর্জনের উৎস এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ উদ্ঘাটনে তাকে আইনের ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করেছে দুদক।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর এইচ বি এম ইকবাল, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তাদের তিন সন্তান মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইকরাম ইকবাল ও নওরীন ইকবালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাশাপাশি তাদের একক নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে তার হিসাবও জব্দ করতে বলে সংস্থাটি।