চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর শাহরাস্তিতে গ্রামীণ রাস্তায় কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণ না করেই অর্ধকোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, প্রকল্পের অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসন বলছে, অর্থ লোপাটের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ করার মেয়াদ এক বছর অতিবাহিত হলেও লোপাটকৃত অর্থ এখনো রয়েছে ঠিকাদারের পকেটেই। প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লোপাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে ফুঁসে উঠছে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
সূত্রমতে, শাহরাস্তি উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার পর্যন্ত কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সূচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামে তপাদার বাড়ি খালপাড়া এলাকায় ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় এক কোটি আট লাখ ৭৪ হাজার ১৭১ টাকা।
প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করার জন্য তাজুল ইসলাম সুমন নামে এক ঠিকাদার কৌশলে কাজ বাগিয়ে নেন। কালভার্ট নির্মাণস্থলে খালে) ওই সময় পানি থাকায় কাজ শুরু করতে পারেননি বলে অজুহাত সুমন। এরপর কাজ শেষ না করেই ২০২৫ সালের মে মাসে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক অর্থাৎ ৫০লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের যোগসাজশেই সরকারি অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠে। অর্থ লোপাটের এই তথ্য জানা গেছে উপজেলার উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির চিঠি থেকে।
চলতি বছরের ২৯ মে ওই চিঠিতে তৎকালীন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সবুজের স্বাক্ষর ও সীল রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা বদলি হয়ে এখন অন্য জেলায় কর্মরত। কাজ না করেই শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঠিকাদার অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন।
এদিকে সরেজমিন রাগৈ কালভার্ট নির্মাণ এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। ওই এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, ঠিকাদার কাজ করেনি। কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে- বিষয়টি জানাজানি হলে কিছু পাথর রেখে যান ঠিকাদার।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, গেল বছর কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদার চলে যান। জানতে পেরেছি তিনি টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। তবে এখান কালভার্ট নির্মাণ খুবই জরুরি। এটি নির্মাণ হলে কৃষকসহ হাজার হাজার মানুষের উপকার হবে।
খালের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা সালেহা বেগম ও মরিয়মেন্নেছা বলেন, কালভার্ট নির্মাণ করা খুবই জরুরি। উপজেলা সদরসহ নানা কাজে আমাদের অনেক দূর ঘুরে চলাচল করতে হয়। কালভার্ট নির্মাণ হলে যাতায়াত অনেক সহজ হবে।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই সময় পানির কারণে কাজ শুরু করতে পারেননি। কিন্তু কাজ না করে কীভাবে ৫০লাখ টাকা উত্তোলন করে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আপনি পিআইও এর সঙ্গে কথা বলেন।
পিআইও মো. সবুজ বর্তমানে বরিশালের বামনা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইজিপিপি প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ আছে পিআইও সবুজের বিরুদ্ধে। ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সুমন শাহরাস্তি অঞ্চলের কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি সিন্ডিকেটের মূলহোতা।
অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে রাস্তায় কৃষি জমির টপ সয়েল সরবরাহ করতেন এই সুমন। ইজিপিপি প্রকল্পে রাস্তা পুনঃনির্মাণের প্রকল্প দিয়ে কৌশলে সরকারি অর্থ লোপাট করতেন পিআইও সবুজ আর সেই প্রকল্পে কৃষি জমির টপ সয়েল সরবরাহ করতেন কথিত ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সুমন।
জানা গেছে,কালভার্টটি নির্মাণের কথা ছিল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে। কিন্তু এরপর ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছর অতিক্রম করে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছর শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ না করেই উত্তোলন করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, রাগৈ গ্রামে কালভাটের কাজ না করেই অর্থলোপাট হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ওই স্থানটি জনগরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে কালভার্ট নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, কাজ না করেই প্রকল্পের বিল উত্তোলন হয়েছে তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
