নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর দূরবর্তী হুমকি নয়, এটি বর্তমান বাস্তবতা। জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণের দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী পদক্ষেপ, বিচক্ষণ পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ। এর আলোকে ডি-৮ এর উচ্চস্তরের জলবায়ু ও নগর সংলাপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ।
আজরবাইজানের রাজধানী বাকুতে আয়োজিত ওই সংলাপে বাংলাদেশ যে তিনটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে, সেগুলো হচ্ছে, জ্ঞান ও প্রযুক্তির নবায়নযোগ্য শক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো ও স্মার্ট শহর পরিকল্পনায় সর্বোত্তম অনুশীলন, গবেষণা এবং স্কেলযোগ্য প্রযুক্তি বিনিময়ে ডি-৮ ‘জলবায়ু ও নগর উদ্ভাবন প্ল্যাটফর্ম’ প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল আটটি দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা ডি-৮। অন্য দেশগুলো হচ্ছে, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, ইরান, তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া। জলবায়ু সংলাপের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে।
শুক্রবারের (১৭ অক্টোবর) সংলাপটির লক্ষ্য, জলবায়ু ও নগর কার্যক্রমকে ডি-৮ দশকীয় রোডম্যাপের (২০২০-২০৩০) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। এই সংলাপের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, জলবায়ু তহবিল গঠন, যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু সংক্রান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
ডি-৮ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত, নদীর তীর ভাঙন এবং লবণাক্ততার অনুপ্রবেশের সমস্যার মুখোমুখি। অনুঘটক হিসেবে সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ডি-৮।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ জরুরি ও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো বিশেষত নগরায়নের দ্রুত গতির সাথে বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে। শুধু ঢাকায়ই বার্ষিক প্রায় অর্ধ মিলিয়ন গ্রামীণ অভিবাসী আসেন, যাদের অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত।
‘আমাদের শহরগুলোকে জলবায়ু চাপের ভুক্তভোগী হিসেবে নয়, বরং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি, সবুজ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হিসেবে দেখতে হবে’- বলেন তিনি।
প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু কার্যক্রমে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণতা থেকে স্থিতিস্থাপকতা ও সমৃদ্ধিতে রূপান্তরের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। পরিকল্পনাগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি, স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো এবং কম কার্বন উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে’।
‘আমরা টেকসই জল ও ভূমি ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী, সমন্বিত কৌশলও বাস্তবায়ন করছি, যা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ বদ্বীপে নগরায়নের চ্যালেঞ্জগুলোকে সরাসরি মোকাবিলা করে। আমাদের নগর এলাকায় আমরা এর সমাধানগুলোও প্রচার করছি। সেগুলো হচ্ছে, কার্বন পদচিহ্ন কমাতে সবুজ বিল্ডিং কোড ও শক্তি দক্ষতার মান, নগর শাসনের ডিজিটাল সমাধান, যেমন স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা এবং ই-গভর্নেন্স প্ল্যাটফর্ম ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান, যার মধ্যে রয়েছে, জলাভূমি পুনরুদ্ধার এবং শহুরে তাপ ও বন্যা প্রশমনে সবুজ স্থান সম্প্রসারণ’।
এছাড়া শহুরে গ্রিডে নবায়নযোগ্য শক্তি একীভূতকরণ, যার লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করা।
বাংলাদেশ সংলাপে জানায়, ‘যদিও আমরা জাতীয়ভাবে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিচ্ছি, কোনো দেশ একা এই সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। এর জন্য সংহতি, উদ্ভাবন এবংসমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন প্রয়োজন’।
ডি-৮ কে বাংলাদেশ আহ্বান জানায়, ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক নগরায়নে অর্থায়ন ও জলবায়ু-স্মার্ট নগর প্রকল্পগুলোর সমর্থনে সংস্থার মধ্যেই নিবেদিতপ্রাণ সম্পদ সংগ্রহ করুন। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থায়ন, ছাড়যুক্ত ঋণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অ্যাক্সেস হবে মূল বিষয়’।
‘সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করুন। যেন তাদের এমন শহর ডিজাইন করার সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা যায়, যা শুধুমাত্র স্থিতিস্থাপকই নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত’।
বাংলাদেশ আরও বলেছে, ‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নগরায়ণ মোকাবিলা একত্রে টেকসই উন্নয়নে ২০৩০ সালের এজেন্ডা ও প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে সরাসরি অবদান রাখবে। ডি-৮ এর সদস্য হিসেবে ১.২৮ বিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার সম্মিলিত জনসংখ্যার সাথে আমাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর ও পদক্ষেপও বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে’।
সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয় যে, ‘আমাদের শহরগুলেঅ ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত না হয়ে স্থিতিস্থাপকতা, উদ্ভাবন ও স্থায়িত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। একসাথে, আমরা এই চ্যালেঞ্জকে আমাদের জনগণের জন্য সবুজ, নিরাপদ এবং আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সুযোগে পরিণত করতে পারি’।
—জা.অর্থনীতি/ এআর






Add Comment