ক্রীড়া ডেস্ক: রিশাদের রেকর্ড ছয় উইকেট শিকারে ৭৪ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঘরের মাঠ মিরপুর শেরে–বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে ছয় উইকেট নিলেন রিশাদ হোসেন। ৩৯তম ওভারের শেষ বলে জেইডেন সিলসকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৩৩ রানে অলআউট করে দলকে ৭৪ রানের জয় এনে দিলেন এই লেগ স্পিনার। উইকেটগুলো শিকারে নয় ওভারে মাত্র ৩৫ রান খরচ করেছেন রিশাদ। বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান পাঁচ ওভারে ১৬ রানে দুটি এবং ১০ ওভারের স্পেলে মাত্র ১৬ রানে এক উইকেট নেন অফস্পিনার মিরাজ।
এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডেতে সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১–০ ব্যবধানে। সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে যেটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় জয়। তারপরও এ জয়ে টানা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে নতুন সূচনার লক্ষ্যে একধাপ এগোলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ, যা ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম। ওই সিরিজে কোনো ম্যাচেই পূর্ণ ৫০ ওভার খেলতে পারেনি টাইগাররা। শেষ দুই ম্যাচে তো ৩০ ওভার পার হওয়ার আগেই ইনিংস গুটিয়ে যায়। এই পরাজয়ের ধারা শুধু আফগানিস্তান সিরিজেই থেমে ছিল না। গত বছরের নভেম্বর থেকে টানা চার ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ, সবগুলোই বিদেশের মাটিতে।
আজ যখন বাংলাদেশের হারের ভয় চেপে বসে, তখন লেগ স্পিনার রিশাদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। ব্যাট হাতেও তিনি দলের জন্য জরুরি কাজটা করে এসেছেন। তার ১২ বলে ২৬ রানের ইনিংসের সৌজন্যেই বাংলাদেশ কোনোমতে ২০০ রানের গণ্ডি পার হয়েছিল। স্কোর দাঁড়ায় ২০৭।
কিন্তু সেই ২০৭ রান মোটেই নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটিই ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাওয়ার প্লে শেষ হলো। ম্যাচের ১১তম ওভারে রিশাদের হাতে বল আসতেই ম্যাচের চিত্র বদলে গেল। তার ঘূর্ণিতে বোকা বনতে লাগলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। অসাধারণ বোলিংয়ে দুটি রেকর্ডের মালিকও হলেন রিশাদ। শুরুটা হয় অ্যালিক আথানেজেকে দিয়ে। তাকে এলবিডব্লু করে ব্রেন্ডন কিংয়ের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ। সেই যে শুরু, এরপর রিশাদের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে কিসি কার্টি, শেরফান রাদারফোর্ড, ব্রেন্ডন কিং ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।
রিশাদের ফাইফার বা পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় তার বলে কাট করতে গিয়ে উইকেট-কিপারের হাতে রোস্টন চেজ ক্যাচ দিলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৫ উইকেটে ৯২। আর রিশাদের বোলিং বিশ্লেষণ, ৭ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট! কী দারুণভাবেই না ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। শুরুটা হয় অ্যালিক আথানেজেকে দিয়ে। তাকে এলবিডব্লু করে ব্রেন্ডন কিংয়ের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ। সেই যে শুরু, এরপর রিশাদের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে কিসি কার্টি, শেরফান রাদারফোর্ড, ব্রেন্ডন কিং ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।
দেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানেডেতে রিশাদের ৫ উইকেট পূর্ণ হয় তার বলে কাট করতে গিয়ে উইকেট-কিপারের হাতে রোস্টন চেজ ক্যাচ দিলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৫ উইকেটে ৯২। আর রিশাদের বোলিং বিশ্লেষণ—৭ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট! কী দারুণভাবেই না ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ উইকেটটি তুলে নিয়ে রিশাদ গড়েন আরও বড় রেকর্ড। সিলসকে গুগলিতে বিভ্রান্ত করে প্রথম স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ বানান তিনি। ফলে ম্যাচসেরার স্বীকৃতিটা আর কাউকে দেওয়ার উপায় রাখেননি এই তরুণ।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায়ও অবশ্য ভালোই শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ১০০ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচও মিস করে বসে। এর মধ্যে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ওপেনার ব্রেন্ডন কিং। অপর ওপেনার আথানেজ করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান। এর পর থেকেই ক্যারিবীয়দের ইনিংসে এক অঙ্কের রানে সাজঘরে ফেরেন ৭ ব্যাটার। শাই হোপকের ১৫, কিয়েসি কার্টির ৯, রস্টন চেজের ৬ ও গুদাকেশ মোতির ৩ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৩৯ ওভারে ১৩৩ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারিসহ ৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই শুরু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাইফ হাসান। ইনফর্ম এই ওপেনার ৬ বল খেলে ৩ রানের বেশি করতে পারেননি।
পরের ওভারেই ফিরেছেন সৌম্য সরকারও। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন জেইডেন সিলস। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে কভার পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। টাইমিং না হওয়ায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজের হাতে ধরা পড়েন। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এক চারে ৬ বলে ৪ রান এসেছে।
৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৭১ রান। ৩২ রান করে শান্ত ফিরলে ভাঙে সেই জুটি।
শান্ত থিতু হয়ে ফিরলেও ব্যক্তিগত ফিফটি পেয়েছেন হৃদয়। এই মাইলফলক ছুঁতে ৮৭ বল খেলেছেন তিনি। কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও উইকেট বিবেচনায় হৃদয়ের এই ইনিংস কার্যকরী ছিল। ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সবমিলিয়ে ৯০ বলে করেছেন ৫১ রান।
হৃদয়ের পর দায়িত্ব নিয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন অঙ্কন। অভিষিক্ত এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়েছেন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে রোস্টন চেইজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। তার আগে ৭৬ বলে করেছেন ৪৬ রান।
অঙ্কন ফেরার পর দুইশ’ স্পর্শ করা নিয়েও শঙ্কা জেগেছিল। তবে শেষদিকে রীতিমতো ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। এক চার আর দুই ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি। তাতে দুইশ’ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ওয়ানডে সিরিজে ২০২৪ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কাকে অবশ্য ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এছাড়া ক্যারিবিয়ানদের নিয়ে আছে সুখস্মৃতি। সর্বশেষ ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। সেবার টাইগাররা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তাদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, জিম্বাবুয়ের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজই একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দেশ, যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে। দুই দলের মুখোমুখি ৪৭ ম্যাচে ২৪ জয়ে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশ জিতেছে ২১ ম্যাচ, বাকি দুটি পরিত্যক্ত হয়েছে।
—জা.অর্থনীতি/এআর






Add Comment