নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন সাড়ে তিন ঘণ্টায়ও নেভেনি। বিমানবন্দরটিতে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠা-নামা সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা বিমানগুলোকেও সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সব ধরনের উড়োজাহাজকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে বলার পাশাপাশি ঢাকামুখী একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি ফ্লাইটও ট্যাক্সিওয়েতে আটকে রয়েছে। ঢাকাগামী ও ঢাকামুখী কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়সূচিতেও প্রভাব পড়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিমান বাহিনী। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের পাশাপাশি কাজ করছে বাহিনীটির দুটি ফায়ার ইউনিটও। সিভিল এ্যাভিয়েশনসহ সেনাবাহিনী ও নৌ-বাহিনীও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সহায়তা করছে দুই প্লাটুন বিজিবিও।
বিমান বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা বুশরা ইসলাম বলেন, ‘৮ নম্বর গেটের কার্গো ভিলেজের পাশের একটি অংশে আগুন লেগেছে। এ অংশে আমদানি করা পণ্য মজুদ রাখা হয়। সোয়া দুই ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা কাছে যেতে পারছি না। বিমান ও অন্য এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইটকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ল্যান্ড করতে বলা হয়েছে। ফলে ঢাকার শাহজালালের পথে থাকা উড়োজাহাজ চট্টগ্রামে অবতরণ করছে।
বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে বুশরা ইসলাম জানান, স্কাই এয়ারের একটি উড়োজাহাজ টেনে সরানোরও চেষ্টা চলছে। সেটি ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এ পর্যন্ত কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। আরও ১৬টি ইউনিট শাহজালাল বিমানবন্দরের দিকে এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোলরুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম।
বিমান বাহিনী সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের আমদানি কারগো এলাকায় আগুন লাগার পর পরই নজরে আসে তাদেরও। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার এবং বাশার থেকে বিমান বাহিনীর অগ্নিনির্বাপণে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল এ্যাভিয়েশনের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিটও অগ্নিনির্বাপণে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস, বিমান বাহিনীসহ বিমানবন্দরে দায়িত্বরতরা কাজ করছেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা লিমা খানম আরও জানান, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিংবা হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত নয়টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেলে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটটি ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইট অবতরণ করে। কোলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছে অন্য একটি।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, যে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে, তার মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছিল। অন্য ছয়টি ফ্লাইটের একটি ব্যাংকক থেকে, আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঢাকায় অবতরণ করার কথা ছিল। বাকি চারটিও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এ সব ফ্লাইট ঢাকার বদলে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে।
দুপুর তিনটা ৩১ মিনিটে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৪০ ফ্লাইটটি ৩৯৬ জন যাত্রী নিয়ে রিয়াদ থেকে উড়াল দিয়েছিল। তবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে বিকেল ৩টা ৩১ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উড়োজাহজটি সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা আছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে নভোএয়ারের অন্য একটি উড়োজাহাজও বেলা তিনটা ১২ মিনিটে যাত্রী নিয়ে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। উড়োজাহজটির সিলেট থেকে বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় উড়োজাহাজটি সিলেট ত্যাগ করেনি। এ ছাড়া সিলেট থেকে ঢাকাগামী অন্য কোনো উড়োজাহাজের ফ্লাইট বাতিল হয়নি।
ব্যাংকক থেকে ঢাকাগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ও শারজাহ থেকে ঢাকাগামী এয়ার এরাবিয়ার এবিওয়াই৫১৪ ফ্লাইট দুটিও চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট কলকাতায় নামানো হয়েছে।
হংকং থেকে ঢাকাগামী ক্যাথে প্যাসিফিকের সিপিএ০৪৯ ফ্লাইটটি শাহজালালে অবতরণ না করে চট্টগ্রামের আকাশে চক্কর দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কুয়ালালামপুরগামী বাটিক এয়ারের ওডি–১৬৩ এবং মুম্বাইগামী ইন্ডিগোর ৬ই–১১১৬ ফ্লাইট এখনও ট্যাক্সিওয়েতে অপেক্ষমাণ।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট ঢাকায় না নেমে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। একইভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর চট্টগ্রামে ফিরে গেছে।
শাহজালাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুন লাগার পর থেকে পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফ্লাইট কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হবে।
—জা.অর্থনীতি/ এআর
