1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

ভুলে ভরা গাইবান্ধা পৌরসভার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ

সঞ্জয় সাহা: 
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ভুলে ভরা গাইবান্ধা পৌরসভার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র। পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, দাখিল, এইচএসসি ও আলিমে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ পাঠদানকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ তথ্য সংগ্রহের আওতায়  ইউনিক আইডির জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্রে  শিক্ষার্থীদের নাম সহ টাইটেল, পিতা, মাতার নামের বানান  ভুল আসছে। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌর  নাগরিকদের। অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করানোর কারনে এসব ভুল হচ্ছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগী সহ সচেতন মানুষরা।
 ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পৌর কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের   হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলা সহ জেলার ৭ উপজেলায় বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের পাঠদানকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত  তথ্য সংগ্রহের আওতায়  ইউনিক আইডির জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র বাধ্যতামূলক করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অনলাইন জন্মনিবন্ধন করতে আসা  শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা।
কারণ ৭ উপজেলার ৮১ টি  ইউনিয়ন ও পৌরসভা কর্তৃক ইস্যু করা অনেকের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ এখন ভুলে ভরা। কিন্তু ওই ভুলের দায় নিচ্ছেন না অনলাইন জন্মনিবন্ধন দায়ীত্বে থাকা কম্পিউটার অপারেটর সহ পৌর কর্তৃপক্ষ।
 পৌরসভায় অদক্ষ টাইপিস্ট দিয়ে কাজ করায়  তারা নিজেরা  টাইপ করতে ভুল করলেও নামের বানান ভুল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলছে যেকোনো কম্পিউটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সংশোধনের জন্য। এই কারনে পুনরায় ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ায় একদিকে যেমন অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে, তেমনি সময় অপচয় হওয়ায় ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে নাগরিকবৃন্দের।
গাইবান্ধা পৌরসভায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে  অনলাইন জন্মনিবন্ধন করতে আসা নারী-পুরুষেরা ডিজিটাল অনলাইন  জন্মনিবন্ধন সনদপত্র সংগ্রহ করার জন্য পৌরসভা কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রতিদিন সারাদিনে যে কয়টি জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র সরবরাহ করছে তার অধিকাংশই  ভুলে ভরা। কারো কারো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, শিক্ষার্থীর পিতা ও মাতার  নামের বানান ভুল করছে অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটররা। হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন সনদে তথ্য ঠিক থাকলেও  অনলাইন জন্মনিবন্ধন এর বাংলা ইংলিশ ফরমেট দুটোই একই কাগজের অপর প্রান্তে হওয়ায় বাংলা ফরমেটে আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, ঠিকানা   লিখলেও ইংলিশ ফরমেটে নেই এসব তথ্য। অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটররা দায়সারাভাবে কাজ করায় এসব ভুল হচ্ছে। অথচ বাহিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইন নিবন্ধন করলে তাতে তথ্য সঠিকই থাকছে।
 এতে করে ইউনিক আইডির জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে যেমন বিলম্ব হচ্ছে তেমনি  অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্রর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে  শিক্ষার্থীদেরকে চাপ দিচ্ছে।
যেমন- গাইবান্ধা ব্রীজরোড কালিবাড়ী পাড়া  ১ নং ওয়ার্ডের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের আবেদনকারী  সঞ্জয় সাহার পিতার নাম হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে চিত্তরঞ্জন সাহা লেখা থাকলেও অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্রে (চিত্তরঞ্চন) সাহা লিখেছে। অপর পেজে ইংলিশ ভার্সনে নেই আবেদনকারীর নাম, পিতা মাতার নাম ও স্থায়ী ঠিকানা।  এ রকম প্রায় বেশিরভাগ অনলাইন জন্মনিবন্ধন ভুলে ভরা।
আবার শহরের ব্রীজরোডের  আহম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতনের ৮ ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী “অম্লান দেব জ্যেতির পিএসসির সার্টিফিকেটে “অম্লান দেব জ্যেতি লিখা থাকলেও তার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্রে “অম্লান দেব জ্যেতি সাহা”  লিখা পড়েছে এবং তার মাতার নাম রনী সাহার নামে ভুল করে (রানী সহা) নাম লিপিবদ্ধ করেছে। প্রকৃত পক্ষে রনী সাহার জাতীয় পরিচয়পত্রে “রনী চাকী” উল্লেখ্য রয়েছে। সে সাথে ইংলিশ ভার্সন কপিতে প্রিন্ট করেনি অদক্ষ  কম্পিউটার অপারেটররা। অন্যদিকে সাদিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্রে সাদিয়া না লিখে (দিয়া)  লিখেছে।
অনলাইন জন্মনিবন্ধনে নাম ভুলের জন্য  ইউনিক আইডির  জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেয়া নিদিষ্ট তারিখের মধ্যে তারা দিতে পারছে না।
  এসব জটিল ভুল সংশোধন করার জন্য ভুক্তভোগীরা স্ব স্ব মেয়র, চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান  শরণাপন্ন হলেও তার সন্তোষজনক জবাব মিলছে না।
জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সনদের ভুল সংশোধনের এখতিয়ার তাঁদের নেই। আবার জেলার পৌরসভার ক্ষেত্রে অনেকে সংশোধনী ফরম পূরণ করে প্যানেল মেয়র, মেয়র, কাউন্সিলর স্বাক্ষর  নিয়ে ই-মেইলে ও ডাকযোগে পাঠাচ্ছে জন্ম নিবন্ধন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট উপ- পরিচালকের দপ্তরে।  কিন্তু এসব সংশোধনী কতদিনে সম্পন্ন হবে তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না।
” ভুক্তভোগী ও অভিভাবক রনী চাকী” সহ একাধিক ভুক্তভোগী ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকার করে বলেন”- অদক্ষ, অশিক্ষিত ব্যাক্তিদের দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ  অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কাজ করায় আমাদেরকে দুবার করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হল। আমার ছেলে অম্লান এর অনলাইন সনদে আমার নাম রনী চাকী’র বদলে ভুল করে রানী সহা লিখেছে। সে সাথে আমার হাজবেন্ট সহ দুই দেবরের অনলাইন সনদে চিত্তরঞ্জন এর স্থলে ভুল করে চিত্তরঞ্চন লিখেছে। এতে করে  নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে   বারবার পৌরসভায় যেতে হচ্ছে। পৌরসভার লোক ভুল করবে আর তার মাসুল কি আমাদেরকে দিতে হবে।! দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে “গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুস সামাদ রোকন এর সাথে সরাসরি  কথা হলে তিনি পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটরদের দোষ চাপা রেখে জানান পূর্ববতী  মেয়র এর সময় বাহিরের লোক দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করায় এসব ভুল হয়েছে।
অন্যদিকে  গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ” স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোছা: রোখছানা বেগম”  এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান- ২০০৯ সালে জন্মনিবন্ধন শতভাগ অনলাইন করার নিমিত্তের আওতায় বাহিরের কিছু অদক্ষ লোক দ্বারা কাজ করিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।  তাই তাদের  ভুলের কারনে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন থাকে যে- বাহিরের লোকই যদি ভুল করে থাকে তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে করা অনলাইন নিবন্ধন কেন সঠিক হয়। এতে করে বলার অপেক্ষা থাকে না সরষের ভিতর ভূত।
এসব ভুল অনলাইন  জন্মনিবন্ধন বিনা  খরচে সংশোধন ও ভুল অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পত্র’র ভোগান্তি  থেকে রক্ষা পেতে  সহজে সংশোধন প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবী জানিয়ে  ভুক্তভোগী পৌর নাগরিকবৃন্দ ও আবেদনকৃতরা পৌর মেয়র, জেলা প্রশাসক সহ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এর  হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি