ফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিশেষ করে রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতা ও গার্মেন্টেস কর্মীদের টার্গেট করে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এসব টাকায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন নিজের নামে রাজধানীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফ্ল্যাট, জমি, গার্মেন্টস ও ট্যুর ট্রাভেলসসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম রুবেল বলেন, আমার স্ত্রী গার্মেন্টেসে চাকরি করত। ২০১৯ সালে তার পাশের এক অপারেটর আমার স্ত্রীকে বলে- তুমি যদি এখানে (কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি.) টাকা রাখো তাহলে প্রতিমাসে লাখে আঠারো’শ টাকা পাবে। পরে আমার স্ত্রী এখানে দেড় লাখ টাকা রাখে। তাকে আবারও বলা হয়, তুমি তো ডিপিএস করো আরও লাভ পাবে। আমার স্ত্রী তাদের কথা মতো দুইটি ডিপিএস করে। একটি ২৫শ ও অপরটি ১২শ টাকার। এসব টাকার লভ্যাংশ প্রতিমাসে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দুই তিন মাস দিয়েছিল। কিন্তু পরে আর টাকা দেওয়া হয়নি। মূল টাকা ফেরত চাইলেও তারা সেটা দেয়নি, উল্টো ঘুরাতে থাকে। এভাবে দীর্ঘদিন তাদের অফিস ঘুরাঘুরি করছি।
মিরপুরের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তার কাছ থেকে বাজার করতেন এমন একজন ইব্রাহিমকে জানায়, আমি কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি.-এ টাকা রেখে লাভ পাচ্ছি; আপনিও রাখতে পারেন। তার কথায় বিশ্বাস করে ইব্রাহিম প্রতিষ্ঠানটিতে একবছর আগে তিন লাখ টাকা রাখেন। কিন্তু তাকে প্রতিমাসের লভ্যাংশ তো দূরে থাক, আসল টাকাই ফেরত দেওয়া হয়নি। দিনের পর দিন ঘুরেও তিনি টাকা ফেরত পাননি।
ইব্রাহিম বলেন, আমি তাদেরকে বলেছি- আমি দেশে ফিরে যাবো। আমার টাকাগুলো ফেরত দেন। আজ ছয় মাস তাদের অফিসে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথাই বলতে পারিনি। আবার ঢুকতেও দেয় না। বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
অপর প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহিম বলেন, আমি তো লেখাপড়া করিনি। যখনই শুনেছি মাসে লাখে ১৮শ টাকা লাভ দেবে, এটা শুনেই সেখানে তিনলাখ টাকা জমা দিছি। ভুল করেছি এই জায়গায়।
আরেক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী বলেন, আমি প্রলুদ্ধ হয়ে প্রায় আট লাখ রাখি প্রতিষ্ঠানটিতে। আমাকে এক দুই মাস টাকা দিলেও পরবর্তীতে আর টাকা দেওয়া হয়নি। আমার মাধ্যমে আমার শ্যালক-শ্যালিকা এখানে টাকা রেখেছিল।
অন্য প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রথম দিকে জসিম সাহেবকে অফিসে দেখতাম। তবে প্রতিষ্ঠানটি যখন বড় হয়ে যায় তখন তাকে আর অফিসে দেখা যায়নি। তিনি এভাবে গ্রাহককে ঠকাবেন সেটা বুঝতে পারিনি।
এদিকে সমবায়ভিত্তিক দারিদ্র্য নিরসনের দায়িত্বে নিয়োজিত সমবায় অধিদপ্তরের অনুমোদন ছিল কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের। ২০১৯-২০২০ সালে সমবায় অধিদপ্তর অডিট করে। অডিটে দেখানো হয় মাত্র ৫১৮ জন সদস্য। লেনদেন মাত্র ৭৭ লাখ টাকা।
তবে র্যাব বলছে, প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার। প্রতিষ্ঠানটিতে লেনদেন হয়েছে শত কোটির টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জসীম উদ্দিন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সোমবার দুপুর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শাকিল আহম্মেদ, চাঁন মিয়া, এ কে আজাদ, রেজাউল, তাজুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন খাঁন, আব্দুস ছাত্তার, মাসুম বিল্লাহ, টিটু মিয়া ও আতিকুর রহমান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জসিমের অবস্থান জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জসিম একটি ইনভিজিব্যুল চরিত্র। আমরা তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। তাকে র্যাব আইনের আওতায় আনবে।