শেরপুর প্রতিনিধি : নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শেরপুরের সীমান্তর্তী তিন উপজেলার বনাঞ্চলে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৭৫টি করাতকল। ওইগুলোর মধ্যে নানা কৌশলে মাত্র ২৮টির লাইসেন্স থাকলেও অবশিষ্ট সবগুলোই অননুমোদিত। অন্যদিকে বনাঞ্চলে অবৈধ করাতকলের ছড়াছড়ির কারণে স্থানীয় অসাধু চক্রের কবলে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বন। আর ওই বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রয়েছে নির্বিকার। সচেতন মহলের অভিমত, ওই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সীমান্তের বনাঞ্চলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে।
জানা যায়, শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রয়েছে সরকারের সংরক্ষিত, রক্ষিত ও অর্পিত বিশাল বনাঞ্চল। সরকারের আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বনভূমির সীমানা হতে ন্যূনতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল (স’মিল) স্থাপন করা যাবে না। এর বাইরেও করাত কল স্থাপনের আগে সরকারি অনুমোদন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে পেতে হয় বন বিভাগের নিবন্ধন। আর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার পূর্বে বা পরে কোন করাতকল পরিচালনা করা যাবে না। ওইসব বিধান লংঘন করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ওইসব বিধি লংঘন করে ওই ৩ উপজেলায় বনাঞ্চলের ১ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৩০টি, ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৫৫টি করাতকল অবৈধভাবে চলছে রাতদিন। এতে উজাড় হচ্ছে বনের গাছ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, করাতকল স্থাপনের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হলেও কেউ মানছেন না সেই আইন।
অন্যদিকে আইন না মানলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলেই যেন খেয়াল-খুশিমতো বসানো হচ্ছে করাতকল। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দাপটের সাথে কাটা হচ্ছে গাছ। রাতের অন্ধকারে চোরাই পথে আসা গাছ দিয়ে চলছে অধিকাংশ স’মিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের লেনদেন, আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠছে এসব করাতকল। অবৈধ করাতকল থেকে নিয়মিত মাসোহারাও আদায় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ওই ৩ উপজেলায় অন্তত ১৭৫টি করাতকল আছে, যার মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ২৮টির। তবে করাতকল মালিকদের অনেকের অভিযোগ, আবেদন করেও বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্স পাচ্ছেন না তারা। ৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শ্রীবরদী উপজেলায়। এ উপজেলায় মোট করাতকল আছে ৭৫টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ৯টির, লাইসেন্সের জন্য আবেদন আছে ৯টির। শ্রীবরদী উপজেলার বন সংলগ্ন রাণীশিমুল ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে করাতকল। সরকারি হিসেবেই বনাঞ্চলের মধ্যে ১৭টি করাতকল চলছে। এখানে বন বিভাগের লোকেরাও অসহায়।
নালিতাবাড়ী উপজেলায় মোট করাতকলে সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে নিবন্ধন আছে ১৫টির, নিবন্ধনের আবেদন আছে আরও ১০টির মত। ২০টির মত করাতকল আছে বনাঞ্চলের মধ্যে।
ঝিনাইগাতী উপজেলায় করাতকলের সংখ্যা ৩০টির মত। নিবন্ধন আছে মাত্র ৪টির। উপজেলার বনাঞ্চল ধানশাইল এলাকায় বনের ভিতর আছে ৪টি করাত কল।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রাণতোষ চন্দ্র রায় বলেন, জনবল সংকট ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও কিছুদিন পর আবার সেই আগের অবস্থায় চলে আসে। আর মোবাইল কোর্টের জন্য বার বার আবেদন করলেও প্রশাসনের ব্যস্ততার কারণে তারা সময় দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, বনাঞ্চল থেকে করাতকল সরাতে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার জানান, অবৈধ করাতকল বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তার মতে, বিষয়টি শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেই সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য সর্বাগ্রে বন বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে।