মুহাম্মদ ওয়াহিদুন নবী বিপ্লব: প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে করা মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মোহাম্মদ কামাল হোসেন। অপরদিকে মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান (বিপ্লব) রিমান্ডের আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, তাপস কুমার পাল এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন জামিনের আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে এদিন বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিল্টন সমাদ্দারকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়। আদালতে মিরপুর মডেল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুনানি শেষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সমাজে যে সমস্ত লোক গুরুতর অসুস্থ থাকে মিল্টন সমাদ্দার তাদেরকে নিয়ে তার বৃদ্ধাশ্রমে রাখতেন। তার আশ্রমে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করত তাহলে সে নিজেই তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিত। সে ডাক্তার না হয়েও ডেট সার্টিফিকেট দেয়। সে যে সার্টিফিকেট দেয় সেটাও ভুয়া। তার বক্তব্য অনুযায়ী তার আশ্রমে ১৮৯ জন মারা গেছে। মৃত সব ব্যক্তিদের কবর দেওয়ার সময় দেখা গেছে কারো পেটকাটা, কারো পিঠে কাটা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা ও ক্ষত। তিনি বলেন, তার এক কোটি ২০ লাখ ফলোয়ার আছে। এসব ফলোয়ার তার ইনকামের কৌশল। সমাজে নিজের ভালো মানুষী মুখোশ দেখিয়ে এসব অন্যায়গুলো সে করেছে। এসব নিয়ে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করেছে। পরবর্তীতে ডিবিও তদন্ত করছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে তার স্ত্রীসহ আরো কারা কারা জড়িত সেটাও তদন্ত করে বের করতে হবে। কারণ এরা দেশ ও সমাজের শত্রু। ভালো মানুষের মুখোশ পরে তারা এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। এ সমস্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আদালতে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ মঞ্জুরির মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আরও অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে। আমি মনে করি এ মামলার সঠিক তদন্ত হয়ে সে যে অন্যায় এবং প্রতারণা করেছে সেগুলো বের হয়ে আসবে।
জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়। এরপর তার আশ্রমের টর্চার সেলে মারধর করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এর আগে ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।