হবিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ হবিগঞ্জ শহরের মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার ঘটনায় ডাঃ এস কে ঘোষসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সিভিল সার্জন ও ডিবির ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল ১৫ মে শায়েস্তানগর সার্কিট হাউজ এলাকার বাসিন্দা (অব:) অফিস সুপার মো: শাহাজাহান বাদি হয়ে মাদার কেয়ার হাসপাতালের গাইনী সার্জন ডা: এস কে ঘোষ (৬০), ডা. বদরুল আলম (৪০), সাবেক সিভিল সার্জন ডা: গোলাম রাজ্জাক (৬৫), সাবেক সিভিল সার্জন ডা: মোঃ আব্দুল্লাহ (৬৪) ও পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম আপন (৪৮) কে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শাহজাহানের পুত্রবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস নিজেও একজন চিকিৎসক। ২০২২ সালের ০৮ মার্চ অন্তঃস্বতা অবস্থায় তাকে মাদার কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলে সেখানকার লোকজন তাকে ভর্তি করেন। এ সময় ডাঃ এস কে ঘোষ নিজেকে অভিজ্ঞ সার্জন হিসাবে উপস্থাপন করলে তারা সিজারে রাজি হন। কিন্তু সিজারের প্রায় ৪১ দিন পর জান্নাতুল ফেরদৌস পেটের কাটা জায়গা সংলগ্ন সেলাইয়ের মধ্য দিযে পুজ ও রক্ত দেখতে পান। বিষয়টি ডা: এস কে ঘোষকে জানালে তিনি ২০ এপ্রিল তার চেম্বারে দেখা করতে বলেন। সেদিন ডাঃ ঘোষ দুইটি ওষুধ দেন এবং ড্রেসিং করার পরামর্শ দিয়ে বলেন ঠিক হয়ে যাবে। তার পরামর্শে ড্রেসিং করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে ডা. ঘোষ ১০ দিন পর আবার ডেসিং করে সেকেন্ডারী সেলাই দেন। কিন্তু পুজ ও পানি পড়তে থাকলে ডাঃ ঘোষ কয়েকদিন ড্রেসিং করে টার্শিয়ারী সেলাই দেন।
কিন্তু জান্নাতুলের অবস্থা আশংকাজনক হতে থাকলে তাকে সিলেটের আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ শামসুন্নাহার বেগম হেনা পরীক্ষার পর অপারেশন করে পেটের ভিতর থেকে সিজারে ব্যবহৃত ফেলে রাখা ফরেন অবজেক্ট রিমুভ করেন এবং করেন বডি গ্রাণুলোমা সনাক্ত করেন। ওই অধ্যাপকের নিকট ০২ মাস চিকিৎসা নিয়েও জান্নাতুলের অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সিটিউট বার্ন এন্ড সার্জারীসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু জান্নাতুলের অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে কেউ তার সুস্থতার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। পরবর্তীতে বাদির ছেলে জান্নাতুলকে ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলুরে সিএমসি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আবারো অপারেশন করে দীর্ঘ ০৩ মাস চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান জান্নাতুলকে আগামী ০১ বছর ভারতের হাসপাতালের ফলোআপে থাকতে হবে। সেখানে ১৯ দিন চিকিৎসা করানো হয়।
মামলায় বলা হয়, জান্নাতুলের চিকিৎসায় ডাঃ ঘোষের অবহেলা ছিলো। এ ছাড়া ওই হাসপাতালে অপরিষ্কার ও সিজার করার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকাস্বত্তেও অধিক মুনাফার আশায় সকল আসামিরা জান্নাতুলের সিজার করেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আসামিরা বাদিকে হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন। জান্নাতুল বর্তমানেও অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। আসামিদের এমন ভুল চিকিৎসার কারণে এখন পর্যন্ত তাদের ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমল আদাল সিভিল সার্জন ও ওসি ডিবি তদন্ত প্রতি বেদন দেয়ার জন্য এ আদেশ প্রদান করেন। মামলা পরিচালনা করেন বাদি পক্ষে এডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম পাঠান (আশিক) ও এডভোকেট রুহি দাশ রায়।