তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক হাজার মানুষকে সাক্ষী রেখে বুধবার শপথ নিয়ে বলেন, ‘৩৪ বছরের সিপিএম সরকারকে যখন হটাতে পেরেছি, তখন ১০ বছরের মোদি সরকারকেও হটাবই।’
তিনি এক বাক্যে জানিয়ে দিলেন, অত্যাচারী বিজেপি সরকারকে কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে না সরালে দেশই আর থাকবে না।লোকসভা নির্বাচনের পর্ব শেষ হতে বাকি আর মাত্র দু’টি দফা। তার আগে এদিন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে খড়দহ এবং পানিহাটিতে জনসভা করেন মমতা। গর্জে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে। দু’টি সভাতেই তাঁর হুঙ্কার—‘৩৪ বছরের সিপিএমকে সরিয়েছি। এবার ভুয়ো, ভাঁওতাবাজ, মাফিয়াবাজ, দাঙ্গাবাজ, এজেন্সিবাজ বিজেপি সরকারকে সরাবই।
এরপরেই এলাকার মানুষের কাছে একেবারে মেঠো ভাষায় নেত্রীর আবেদন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশ বাঁচানো। গণতন্ত্র বাঁচানো। তাই এবার ভোট দিয়ে বিজেপির নাকে ঝামা ঘষে দিন।’
এদিন তাঁর বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে নিজের অতীত সংগ্রামের কথা। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন কীভাবে সিপিএমের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর উপর আক্রমণ কম হয়নি। এমনকি প্রাণনাশের চক্রান্ত পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু অদম্য জেদ আর হার না মানার মানসিকতাই তাঁকে লড়াইয়ের ময়দানে অনন্য করে রেখেছে। শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেসও বাংলার শাসন ক্ষমতা থেকে সিপিএমকে সরাতে পারেনি। কিন্তু আলাদা দল গঠন করে মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই মমতা সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন। ২০১১ সালের সেই পরিবর্তনের ভোটেরই পুনরাবৃত্তি ২০২৪-এ দেখতে চান তিনি। এদিন তাই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের লড়াই কেন্দ্রের সরকারে পরিবর্তন ঘটানোর।
বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে এসে বারবারই মমতা ও তাঁর দলকে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় নেতারা। সাফ দাবি করছেন, লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপির ভালো ফল হলে, বছর খানেকের মধ্যেই বাংলায় তৃণমূলের সরকার পড়ে যাবে। এদিন সেকথার জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচন বিধানসভার নয়, লোকসভার। দিল্লি কে চালাবে, তার নির্বাচন। বিজেপির কত বড় সাহস! বলছে, বাংলায় সরকার ফেলে দেবে, বাংলার দখল নেবে। ওরা কোনওদিন বাংলার দখল নিতে পারবে না। বরং এবার দিল্লিতে আমরা দখল নেব।’ মমতার আরও সংযোজন, ‘তৃণমূল ভাঙার আগে বাংলা ও দেশের মানুষ তোমাদের কোমর ভাঙবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।’
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে বাংলা এবং তৃণমূল সরকারের নিন্দা করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ইতিমধ্যে সেটিকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের নির্দেশ গেরুয়া শিবিরের বিপক্ষে গিয়েছে। এদিন সেই সূত্রে মমতা বলেছেন, ‘মানহানি মামলা করব। প্রমাণ করতে হবে আমি এক পয়সা কারও কাছ থেকে খেয়েছি। প্রমাণ না করতে পারলে আমাকে এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। ওই টাকা আমি জনগণকে দিয়ে দেব। কোর্টের রায় আমি পেয়ে গিয়েছি, এবার খেলাটা আমার হবে।’