এই সিরিজের আগে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশসমূহের মধ্যে শুধু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে সবচেয়ে বড় আপসেট ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
৪৮ ঘন্টা আগে ৫ উইকেটে জিতে উজ্জীবিত অভিবাসীদের দল যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার দিয়েছে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ১০ ধাপ উপরে থাকা বাংলাদেশ দলকে চরম লজ্জা।
দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ রানে জিতে বাংলাদেশকে সিরিজ হারের লজ্জা দিয়েছে আইসিসির সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্র! ১ ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের উৎসব করা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পাওয়ার শঙ্কাও দেখছে বাংলাদেশ সমর্থকরা।
ধারাবাহিক অফ ফর্মের কারনে লিটনকে ড্রপ দিয়ে, শেখ মেহেদীকে কম্বিনেশনের কারনে বিশ্রাম দিয়েও লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং রসায়নটাই যেনো ভুলে গেছে বাংলাদেশ দল। ১৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে এসে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে (৪৩/২) সৌম্য (১ বলে ০), তানজিদ হাসান তামিম (১৫ বলে ১৯)-কে হারানোর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত-হৃদয়ের ৩৭ বলে ৪৮ রানের পার্টনারশিপে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। তবে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ৪৬ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে আটলান্টিকে ডুবেছে বাংলাদেশের তরী!
অফ ফর্ম কাটিয়ে ফর্মে ফেরা শান্ত হারমিত সিং-কে এক ওভারে ২ট ছক্কা মেরে নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে বোলার অ্যান্ডারসনের থ্রো-তে রান আউটে শান্ত কাঁটা পড়ায় (৩৪ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩৬) খেয়েছে ধাক্কা। অ্যান্ডারসনের পরের ওভারে ইনফর্ম হৃদয় মিড উইকেটে ক্যাচ (২১ বলে ১ ছক্কায় ২৫) দিলে পরিস্থিতি কঠিন করে তোলে বাংলাদেশ।
স্টিভানো টেলরকে সাকিব এক ওভারে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা এবং স্ট্রেইট বাউন্ডারি মারলে শেষ পাওয়ার প্লে-এর ৩০ বলে ৩৮ রানের সহজ টার্গেটের সামনে দাঁড়িয়েও হতোদ্যম হয়েছে বাংলাদেশ। শ্যাডলি ভ্যানের শেষ স্পেল (২-০-১০-২) দেখে উজ্জীবিত পেসার আলী খানের শেষ স্পেল(১.৩-০-৯-৩) বাংলাদেশের কফিনে ঠুঁকেছে পেরেক।
ভ্যান শ্যাডলি কে শাফল করে সুইপ করতে যেয়ে জাকের আলী অনিক (৫ বলে ৪) ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে শুরু করেছেন শবযাত্রা। আলী খানের ৯ বলের শেষ স্পেলের প্রথম বলে এক্সট্রা কভারে খেলতে যেয়ে বোল্ড হয়েছেন সাকিব (২৩ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩০)। তৃতীয় বলে টেল এন্ডার তানজিম হাসান সাকিবও বোল্ড (২ বলে ০)। ইনিংসের ৪ বলে ৭ রানের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, তখন আলী খানেও ওই ওভারের তৃতীয় বলে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি শাফল করে স্কুপ করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ রিশাদ (৫ বলে ৯)।
প্রথম ম্যাচে ২ পেসার নিয়ে খেলার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যাটারদের সমীহ আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সিরিজে ফিরতে দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিং কম্বিনেশনে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ৩ পেসার, ২ স্পিনার ফর্মূলায় এদিন পার্ট টাইম কোনো বোলার ব্যবহার করেননি অধিনায়ক শান্ত। ৫ বোলারের সবাইকে বোলিং কোটা ৪ ওভার করে করিয়েছেন শান্ত। তাতেই বোলিং ইউনিট ছন্দে ফিরেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ১৪৪/৬-এ আটকে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিযে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে যুক্তরাষ্ট্রকে ঝাঁকুনি দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-এর প্রথম ৬ ওভারে যুক্তরাষ্ট্র উইকেটহীন ৪২ রানে চোখ রাঙিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ দলের দুই সেরা বোলার সাকিব-মোস্তাফিজকে এদিন ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে আমলে আনেননি স্টিভেন টেলর।
মোস্তাফিজের প্রথম ওভারে মেরেছেন ছক্কা। সাকিবের প্রথম ওভারে মেরেছেন এক ছক্কা, এক চার! প্রথম ওভারে সাকিবের খরচা ১৫! তবে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-এর পর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে বাংলাদেশ। পর পর দুই বলে লেগ স্পিনার রিশাদ স্টিভেন টেলর (২৮ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৩১) এবং আন্দ্রেস গাউসকে (১ বলে ০) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন।
তবে রিশাদের দেয়া এমন চাপ কাটিয়ে উঠে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যুক্তরাষ্ট্র যোগ করেছে ৫৬ বলে ৬০ রান। তবে ১৬তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে অ্যারন জোন্স মিড অনে (৩৪ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩৫) ক্যাচ দেয়ার মধ্য দিয়ে বিপর্যয়ের শুরু যুক্তরাষ্ট্রের। শেষ পাওয়ার প্লে-তে মোস্তাফিজ-শরিফুলের বোলিংয়ে ৪৩ রানে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ৪ উইকেট। কোরে অ্যান্ডারসনকে এদিন ভয়ংকর হয়ে উঠতে দেননি শরিফুল। ওভারপিচ ডেলিভারিতে করেছেন বোল্ড (১০ বলে ১১)। যুক্তরাষ্ট্র অধিনায়ক মোনাক প্যাটেলকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি এই বাঁ হাতি পেসার। ওই ওভারে স্কুপ করতে যেয়ে প্যাটেল হয়েছেন বোল্ড (৩৮ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪২)।
রিশাদের দারুণ একটি দিনে (২/২১) শরিফুল (২/২৯) এবং মোস্তাফিজ (২/৩১) পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব কাটিয়েছেন উইকেটহীন (৪-০-৩৫-০)।
জিম্বাবুয়ের কাছে হোমে সিরিজের শেষ ম্যাচে হার দিয়ে শুরু, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টানা ২ হার-এ হারের হ্যাটট্রিকও হয়ে গেল। বিশ্বকাপের ভেন্যুতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দে জিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবতীর্ন হওয়ার পরিবর্তে এখন উল্টো আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল দুটোই যে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল।
যুক্তরাষ্ট্র : ১৪৪/৬ (২০.০ ওভারে)
বাংলাদেশ : ১৩৮/১০ (১৯.৩ ওভারে)
ফল : বাংলাদেশ ৬ রানে পরাজিত।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : আলী খান (যুক্তরাষ্ট্র)।