শিশু-কিশোরদের সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাদের ন্যায় ও সত্যের পথে চলারও পরামর্শ দেন তিনি।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব সময় যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সেই সঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পথে চলবে, তাহলেই জীবনে বড় হতে পারবে। জীবনটাকে উন্নত করতে পারবে। বাবা-মায়ের মুখও উজ্জ্বল হবে।
লেখাপড়া ও নৈতিক চর্চার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছোট্ট সোনামনিরা, আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই, তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, লেখাপড়া শেখো। সেই সঙ্গে তোমাদের দরকার হচ্ছে নিয়মশৃঙ্খলা মানা, অভিভাবকদের কথা শোনা, শিক্ষকদের কথা শোনা, শিক্ষকদের কথা মেনে চলা, এটা কিন্তু খুব দরকার।
শিশুদের জীবনকে আরও সুন্দর ও রঙিন করে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিশুদিবসে এবারের প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙিন। ’ আমরা শিশুদের জীবন আরও রঙিন, আরও সুন্দর, আরও সার্থক করে গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি এটাই চাই, আজকের শিশুরা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, জীবনটাকে সুন্দর করবে।
সরকার প্রধান আরও বলেন, আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, কাজেই শিশুর জন্য আমাদের সব কিছু। যা কিছু আজ করে যাচ্ছি, শিশুদের কথা চিন্তা করেই করে যাচ্ছি। আমরা যে বাংলাদেশটাকে গড়তে চাই। আমাদের এ শিশুরাই তো একদিন আমাদের মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা বড় বড় বৈজ্ঞানিক হবে। তারা যেন নিজেদের গড়তে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে যাচ্ছি।
আমি জানি করোনার কারণে এখন স্কুল বন্ধ। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। এটা অত্যন্ত কষ্টের। তারপরও আমি বলবো, তোমরা ছোট্ট সোনামনিরা, তোমরা ঘরে বসে লেখাপড়া করো এবং সেই সঙ্গে খেলাধুলাও করবে। খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা এগুলো একান্তভাবে অপরিহার্য। তোমরাই তো ভবিষ্যৎ, তোমরাই এদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনার এ প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই আমরা স্কুল খুলে দেবো। তোমরা স্কুলে যেতে পারবে। সেই সঙ্গে খেলাধুলাও তোমরা করতে পারবে এবং এখনো করতে পারো।
নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছি। যাতে শিশুর ওপর কোনো রকম অত্যাচার-নির্যাতন না হয়। আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করেছি। অপরাধীর আরও কঠিন শাস্তি যাতে হয়, সে ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের প্রতি এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক কাজ যেন কেউ না করে, সবাইকে সে অনুরোধ করছি।
শিশুরা যেন মাদক-সন্ত্রাসে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের প্রভাব থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকের হাত থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। এদিকে আপনারা যারা বয়স্ক আছেন, মুরুব্বিরা আছেন, অভিভাবকরা আছেন, শিক্ষকরা আছেন বা মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন, তাদের সবাইকে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের শিশুদের জীবনটা সুন্দর হোক, আমরা সেটাই চাই।
শিশুখাদ্য এবং শিশুদের ব্যবহার করা সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের পাশাপাশি সরকারের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতে বিনা পয়সায় বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি, প্রতিটি এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
শিশুদের প্রতি জাতির পিতার ভালোবাসার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় এটাই ভাবতেন যে শিশুরাই তো ভবিষ্যৎ এবং শিশুদের তিনি এতো ভালোবাসতেন বলেই আমরা জাতির পিতার জন্মদিনটাকে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। অর্থাৎ শিশুরাও একটা গুরুত্ব পাবে, তাদের জন্য একটা দিবস থাকবে। সেই সময়ে সবাই তাদের কথা চিন্তা করবে, তাদের ভালোমন্দ দেখবে। তাদের জন্য কাজ করবে।
দুই শিশুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি শিশু বক্তব্য দেয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
পরে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তা উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আবৃত্তি করে শোনান দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্ননীল বিশ্বাস।