কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার মুরাদনগরে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করায় ছেলেকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে ৪৮ঘন্টার মধ্যে অভিযোগ তুলে না নিলে ওই ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধীর পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার হুমকিও প্রদান করেছে ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান উপজেলার ১২ নম্বর রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডেও মেম্বার ও তেমুরিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। এছাড়াও ওই ইউপি সদস্য সাইদুরের বিরুদ্ধে উপজেলা বাঙ্গরা বাজার থানায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাসহ একাধীক মানুষের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তেমুরিয়া গ্রামের ভূক্তভোগী প্রতিবন্ধী রহম আলীর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত জুলাই/১৯ থেকে জুন/২০ পর্যন্ত এক বছরের ৯ হাজার টাকা ভুয়া টিপসই দিয়ে তুলে নেয় সাইদুর রহমান মেম্বার। পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভাতার বইটি প্রতিবন্ধী রহম আলীর ছেলে হাবিবের কাছে দিয়ে বলেন ২৫ ফেব্রুয়ারি জনতা ব্যাংকের রামচন্দ্রপুর শাখা থেকে টাকা তোলার জন্য। ব্যাংকে গিয়ে হাবিব জানতে পারে বিগত এক বছরের টাকা তোলা হয়ে গেছে। পরে মেম্বারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে সে ‘সমাজ সেবা অফিসের লোক টাকা তুলে নিয়ে গেছে এমন অভিযোগ করে। পরে হাবিব গত সোমবার সমাজ সেবা অফিসে গিয়েও কোন প্রকার সহযোগীতা না পেয়ে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ইউপি সদস্য সাইদুরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর। অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে ইউপি সদস্য সাইদুর তার বাবা আব্দুল হাকিম ও তার দুই ভাই সোমবার রাতেই হাবিবকে বাড়ী থেকে তুলে এনে বেধরক মারধর করে। পরদিন মঙ্গলবার অভিযোগ তুলে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় ভূক্তভোগী হাবিবকে। এতেও কোন প্রকার কাজ না হওয়ায় ৪৮ঘন্টার মধ্যে গ্রাম ছাড়ার হুমকি দেয়া হয় ওই প্রতিবন্ধীর পরিবারটিকে।
প্রতিবন্ধী রহম আলীর স্ত্রী খুশিয়ারা বেগম মুঠোফোনে জানান, অভিযোগ দেয়ার পরেই তার ছেলে হাবিবকে মেম্বারের লোকজন এসে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং তাকে বলে যায় আগামী ৪৮ঘন্টার মধ্যে অভিযোগ না উঠালে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নইলে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়ানো হবে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, ‘সমাজ সেবা অফিসের সাহেব আলী প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি আমার হাতে দেন। আমি প্রতিবন্ধী রহম আলীর ছেলে হাবিবের কাছে কার্ডটি বুঝিয়ে দেই।’ গত এক বছরের টাকা আত্মসাত ও মারধরের অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে এমন প্রশ্নে মেম্বার সাইদুর রহমান মোবাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কবির আহামেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে এ বিষয়ে কথা বলব।’ মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, ‘ভাতার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি সত্যতা খতিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মারধরের বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, যদি কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই তাকে আইনি সহায়তা দেয়া হবে।