আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাবের মধ্যে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন।
কী হতে চলেছে বাজেটে? অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ বলছে, সাধারণ মানুষ চায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসুক। এবং আগামী বাজেটে সে চেষ্টা থাকবে তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজেটে যা করার আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বাজেটের বিষয়ে তার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ১৪ মে গণভবনে বাজেট বিষয়ক সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। ওই সভায় কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি টেকসই করার বিষয়টিতে জোর দিয়ে সরকারের প্রতি আগামী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্য ভর্তুকিতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করার কথা বলেছেন তারা।
সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তারা বলছেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে আমদানিতে, বাড়বে পণ্যের দাম। ফলে সাধারণ মানুষকে বাড়তি দামের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে ওষুধ ও মেডিকেল সামগ্রীর মতো জরুরি নিত্যপণ্য, নবায়নযোগ্য শক্তি সংশ্লিষ্ট আমদানি, কৃষি উপকরণ এবং বিপুল কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে জড়িত প্রকল্পের জন্য আমদানির ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হওয়ার কথা বলেছেন কিছু অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদ মিহির কুমার রায় বলেন, আগে থেকে চলে আসা অর্থনৈতিক সংকট বিদ্যমান। পাশাপাশি আছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির থাবা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সতর্কতামূলক বাজেটের বিকল্প নেই। এবার নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। তাই উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও আছে। আর্থিক খাতের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাজেট দিবে সরকার সেটি নিশ্চিত। নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট হওয়ায় নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
সেই বিবেচনায়, দ্রব্যমূল্য নাগালে আনলে অন্তত ৩০ প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। আসছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয় তবে বাজারে এই পণ্যগুলো আগের চেয়ে কমমূল্যে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রানুসারে পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য।
এদিকে, আগামী এডিপিতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার জন্য সব মিলিয়ে ৭৬৬টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই তালিকা ধরে আগামী অর্থবছরজুড়ে প্রকল্পগুলো পাস করা হবে। এর মধ্যে সরকার ৬৮২ প্রকল্পকে ‘উচ্চ’ অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৮২টি প্রকল্পকে ‘মধ্যম’ এবং ১৪টি প্রকল্পকে ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ২৭০ কোটি টাকায় কর্মসংস্থান ব্যাংক ভবন নির্মাণ এবং ১১৫ কোটি টাকায় মিরপুরে তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স নির্মাণও এখন সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে। এই তালিকায় আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, গাজীপুর, ফরিদপুর, বাগেরহাটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সার্কিট হাউস ভবন নির্মাণ।