এটিএম মাজহারুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার (কুমিল্লা): মৌলভীবাজার বড়লেখা উপজেলা শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। তারই ধারাবাহিকতায় বড়লেখা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখপানে। এই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে যাঁরা আলোয় উদ্ভাসিত করে অঞ্চলটিকে করেছেন আলোকিত, তাঁদেরই অন্যতম জনাব মো. নিয়াজ উদ্দীন।
প্রায় তিন দশকের শিক্ষকতার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায় তিনি আজ বড়লেখার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বছরের পর বছর, রাতের পর রাত যাঁর সাথে আমাদের সময় কেটেছে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর সাংবাদিকতার মন্ত্র নিয়ে। বাঁধভাঙা যৌবনের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাহিত্য সাংবাদিকতার সমৃদ্ধ অতীত গ্লানিবোধটুকু ভুলে যাই আমরা তাঁর সাথে স্মৃতিময় মুহূতর্গুলো স্মরণ করলে।
বড়লেখা, জুড়ী ও বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রথম সরকারি ডিক্লারেশনপ্রাপ্ত সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক বড়লেখা’ পত্রিকা কার্যালয় একসময় ছিল আমাদের সাহিত্য সাংবাদিকতার উজ্জ্বল অধ্যায়ের সাক্ষী। আর সেই সূতিকাগারের মধ্যমনি ছিলেন বড়লেখা কলেজের তৎকালীন প্রভাষক এই নিয়াজ উদ্দীন স্যার। যিনি অত্যন্ত সানন্দে গ্রহণ করেন সাপ্তাহিক বড়লেখার সাহিত্য সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব। সাপ্তাহিক বড়লেখায় লিখে বর্তমানকালে অনেকে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় প্রতিষ্ঠা লাভের পথে হাঁটছেন। আর তিনি বৃহত্তর এলাকার একমাত্র সংবাদপত্রের মানোন্নয়নে কাজ করে যান নিরলসভাবে।
বাংলা বানান ও ভাষার উৎকর্ষ সাধনে তিনি নানাভাবে আমাদের সহায়তা করছেন অবলীলায়। ২০০৩ সালে বড়লেখা থেকে প্রকাশিত ‘ত্রৈমাসিক অঙ্গীকার’ ম্যাগাজিন তাঁর সম্পাদনায় কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ‘সাপ্তাহিক বড়লেখা’য় তাঁর কয়েকটি প্রবন্ধ/ নিবন্ধ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে ‘সাপ্তাহিক বড়কণ্ঠ’, সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ ‘ এবং বিয়ানীবাজার থেকে প্রকাশিত ‘ সাপ্তাহিক দিবালোক ‘ পত্রিকায় তিনি সমানতালে প্রবন্ধ/ নিবন্ধ লিখেছেন। ‘ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ প্রসঙ্গ : সমাজ ও সাহিত্য ‘ ২০০৮ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। বড়লেখার সাবেক ইউ.এন.ও খন্দকার মুদাচ্ছের বিন আলীর উদ্যোগে ২০২২ সালে বড়লেখার সাংস্কৃতিক চর্চা: একাল সেকাল এবং ‘বড়লেখার ক্রীড়াঙ্গন’ নামক দুটো সমৃদ্ধ ম্যাগাজিনের তিনি ছিলেন সম্পাদকদের অন্যতম। প্রুফ রিডিংসহ সকল কাজে দিন-রাত শ্রম দিয়েছেন তিনি।
‘সাপ্তাহিক বড়লেখা’র যৌবনকালে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘সাপ্তাহিক বড়লেখা’ আয়োজিত ‘স্বাধীনতার চেতনা ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তাঁর লিখিত ও উপস্থাপিত প্রবন্ধ সুধীমহলে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
২০১৫ সালে তৎকালীন বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির অনুমোদিত প্রথম বার্ষিকী ‘কলধ্বনি’ তিনি সম্পাদনা করেছেন।
সিলেট থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন ‘ভাস্কর’ এর তিনি সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘ভাস্কর’ এর ‘কবি দিলওয়ার সংখ্যা’ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রেফারেন্স বুক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সমিতি ও সামাজিক সংস্থার উন্নয়ন এবং কর্মকাণ্ডে তাঁর সরব উপস্থিতি আশাজাগানিয়া। সদালাপী, পরোপকারী, দ্বীনদার এ ব্যক্তিত্ব সত্য সুন্দর ও সম্মানজনক সাহসী পদক্ষেপে থাকেন সম্মুখপানে সবসময়ে। বিনয় তাঁর চরিত্রের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। বড়লেখার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও তিনি সম্পৃক্ত থেকে কাজ করছেন। ছাত্র- ছাত্রী, শিক্ষক সমাজসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে তাঁর হৃদ্যতা পরিলক্ষিত হয়।
বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগের এই কৃতী সন্তান বড়লেখা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। ২০১৫ সালে তিনি বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কলেজটি মৌলভীবাজার জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজ হিসেবে যাত্রার সূচনালগ্নে তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব লাভের পর সুনামের সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
পেশাগত কাজের সূত্র ধরে তিনি বসতি স্থাপন করেন বড়লেখার নারী শিক্ষার উন্নয়নের আরেক সূতিকাগার নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজ প্রতিবেশী হয়ে। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ পানিধার গ্রামের মো. জছির আলীর কৃতী কন্যা স্কুল শিক্ষিকা শেলীনা আক্তারকে জীবনসঙ্গী করে সংসার শুরু করেন ১৯৯৬ সালে। তাঁদের কোলে জন্ম নিয়ে আজ স্নেহের ছোট নীপ এগিয়ে যেতে চায় আদর্শ পিতা- মাতার অনুসরণে আদর্শ সন্তান হিসাবে। তাঁদের একমাত্র সন্তান নাদের নিহাল নীপ সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির CSE সাবজেক্টে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিচ্ছে এখন।
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি তাঁকে। কামনা করি পরিবারিক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। মহান আল্লাহর কাছে অধ্যক্ষ মো. নিয়াজ উদ্দীনের সুস্বাস্থ্য ও নেক হায়াত কামনা করি।