প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে সাফল্য ও অগ্রগতি দেখাচ্ছেন, তা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য সবচেয়ে সম্মানের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। গত ৫০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের জনগণের অনুপ্রেরণামূলক অগ্রগতি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার নিদর্শন।
রাজাপক্ষে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান শীর্ষ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ অংশীদার। গত কয়েক দশকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে ‘ব্লু ইকোনমি’ (সমুদ্র অর্থনীতি) উৎসাহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব সমুদ্র বিষয়ে শ্রীলঙ্কার উদ্যোগকেও অনুপ্রাণিত করেছে। কৃষি খাতে বাংলাদেশের বিশাল অগ্রগতি শ্রীলঙ্কারও দৃষ্টি কেড়েছে। ঢাকায় সার্ক কৃষি কেন্দ্রের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে বলে জানান রাজাপক্ষে। তিনি এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আরো সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারির অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি সশরীরে বাংলাদেশে এসেছেন শ্রীলঙ্কার জনগণের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, বাংলা থেকে লোকজন সমুদ্রপথে প্রথম শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিল আড়াই হাজার বছর আগে।’ তিনি বলেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেও বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভালো বাণিজ্য হতো বলে মনে করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। ১৯৭১ সালেই শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী প্রসঙ্গে রাজাপক্ষে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা উদযাপন করছে। দুটি ঘটনাই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন নীতিবান মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের জনগণ, তাদের ভাষা ও ভালোর জন্য।
মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) তাঁর দেশের জন্য যে স্বপ্ন লালন করতেন, তা বাস্তবায়িত হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেননি।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার যন্ত্রণা তিনি বুঝতে পারেন। ওই দিন এই রাষ্ট্র তার নায়ক ও স্বাধীনতার জনককে হারিয়েছে। একই সঙ্গে প্রিয় মেয়ে হারিয়েছেন তাঁর মা-বাবা ও সহোদরদের।
রাজাপক্ষে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার অংশ উদ্ধৃত করে নিজের মতো বলেন, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, পিতঃ, দেশকে করো জাগরিত।’ রাজাপক্ষে বলেন, ‘এই একুশ শতকে, এশিয়ার মহান প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের দুই প্রজন্মের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের অগণিত আত্মত্যাগ বিষয়ে জানা প্রয়োজন।’
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধির পাশে আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক রূপান্তর, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মতো শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ উর্বর ও প্রচুর ফসল হয়। আমাদের দেশের মতো উর্বর জমি পৃথিবীতে খুব কম দেশেই আছে।’ রাজাপক্ষে বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান বাণিজ্য, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও সমুদ্রবিষয়ক সহযোগিতা জোরদারে বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’
রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য আন্তরিক ও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।