শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রীপুরের প্রতিনিধি সিফাত উল্লাহ ফকির বলেন, আমরা মাওনা উড়াল সেতুর নিচে ময়লা পরিষ্কার করছি, আমরা জায়গায় জায়গায় ট্রাফিকের কাজ করছি সেসব কাজে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে পাচ্ছি না। কেন পাচ্ছি না? আমরাতো আপনাদেরই সন্তান, আমরা নতুনভাবে দেশ গঠনের জন্য অন্দোলনে গিয়েছি। আমাদেও কি কোন স্বার্থ ছিল? উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন আপনারা আছেন আপনাদের সভা, মিছিল মিটিং নিয়ে। বিনীত অনুরোধ করব আপনারা দয়া করে শৃঙ্খলার জন্য কাজ করেন। দেশটাকে নতুন করতে গড়তে আমাদেরকে সহযোগীতা করেন।
তিনি আরো বলেন, গত দুই দিন আগে বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামে একটি হিন্দু পরিবারের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আমরা অনুসন্ধান করে দেখি এ ঘটনায় বিএনপি নেতা শামসুল হক জড়িত। উনার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই নেতা উল্টো হিন্দু পরিবারের সদস্যদেরকে হুমকি দিয়ে আসছে আগামী বুধবারের মধ্যে ২০ লাখ টাকা না দিলে তাদের পরিবারের বাড়ীঘরসহ সকল সদস্যকে পুড়িয়ে দিবে। উপস্থিত বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি দেখার জন্য এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে সাহায্য সহযোগীতার অনুরোধ করেন।
সোমাবর (১২ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় শ্রীপুর থানা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দের সাথে থানার কার্যক্রম শুরু করার মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকির দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো অবস্থাতেই কারো বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা করবেন না। পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পূর্বে পুলিশ নিজে বিএনপি কর্মীদের ধরে তাদের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। আপনারা আমাদের ভাই, বন্ধু। আপনাদের পাশে থেকে আমরা দেশকে দুর্ণীতি ও অরাজকতা মুক্ত করতে চাই।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটা যুদ্ধ আমাদের সন্তানেরা করেছে। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে এবং জনতাও তাদের সাথে ছিল।
শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের নিজের দায়িত্ব পালন করবেন। কোন নেতার প্ররোচনায় ও আশির্বাদে কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য যদি আপনাদেরকে সুপারিশ করে তাহলে তাদের কথা শুনবেন না। আপনারা জনসাধারনের সেবক, আমরা আপনাদের সহযোগী এবং পাশে থাকবো।
শ্রীপুর উপজেলা জামায়েত ইসলামীর আমীর নূরুল ইসলাম বলেন, যারা আন্দোলন করে বিজয়ে আহত হয়েছেন তারা গাজী। এই বাংলাদেশে ৭১ এর পরে ২০২৪ সালে দ্বিতীয়বার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা কোনো পরাশক্তি রাষ্ট্রের অধীনে নয়। এই স্বাধীনতা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের। যারা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ছিল তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, তাদের মাধ্যমে দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। রাজনৈতি দলের নেতৃবৃন্দ পারি নাই, আমাদের সন্তানেরা, ছাত্ররা নতুন করে দেশ প্রেমে উদ্বুত্ব হয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন দেশের জন্য কিভাবে জীবন দিতে হয়, কিভাবে কাজ করতে হয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত বাংলাদেশের কোনো সেক্টরে দুর্নীতি হবে না। যারা নির্যাতন করেছে তারা জালেম, যারা নির্যাতিত ছিল তারা মজলুম। জামায়েত ইসলামীর কোন জনশক্তি যদি জুলুম করে সে জালিম এবং জামায়েত ইসলামীর কোন কর্মী না। বাংলাদেশের কোনো জামায়েত ইসলামীর কর্মী ভাংচুরের সাথে জড়িত নয়। নতুন বাংলাদেশকে গড়তে জামায়েত ইসলামীর কর্মীরা সব জায়গায় ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করবে এবং পুলিশদেরকে আর ব্যবহার করব না। জনগনের সেবক হিসেবে আমরা পুলিশকে তৈরি করতে চাই।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, আপনারা যত বেশি থানা পুলিশকে সহযোগীতা করতে পারবেন, পুলিশ ততবেশি আপনাদেরকে সেবা দিতে পারবে। আন্দোলনের উদ্দেশ্যে হলো সকলের সহযোগীতায় এ দেশকে দুর্ণীতিমুক্ত করা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজমীর হোসেন বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে পষুত্ব আছে। আমাদের সেই পুষুত্বকে দমায়ে রাখতে হয়। আমরা আর চাই না পরিবর্তীত পরিবেশে পষুত্ব আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই থানা কেন্দ্রীক যে দালাল সিন্ডিকেট আছে তারা যেন আর এ সুযোগ নিতে না পারে। তাদেরকে বিতারীর করতে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। আমাদের সাথে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের ভুলত্রæটিগুলো তুলে ধরবেন। এখন থেকে চাটুকারিতা, চাটামি, দালালি এগুলো আমার মনে হয় না আর দরকার আছে। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন। ব্যক্তি সুবিধার জন্য দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে দয়া করে সেগুলোর ক্ষতি করবেন না। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনী জীবন দিয়েছে, মানুষের মুখোমুখি দঁড়িয়ে গিয়েছে। এর জন্য আমি শুধু সরকারকে দায়ী করব না, প্রত্যেকটা মানুষের দায় আছে যারা পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজমীর হোসেন, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকির, আব্দুল মোতালেব, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আল মাষ্টার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শ্রীপুর উপজেলা সভাপতি আলমগীর হোসেন প্রমুখ।