আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, রচনা করা হয় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হত্যা করা হয় তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাকে ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত থাকতো ইতিহাসের কলঙ্কময় এই দিনটি। ৯৬ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৫ আগস্ট উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচিতে রয়েছে, আজ সূর্যোদয়ের সময় দলের সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সাড়ে ৮টায় মিলাদ মাহফিল। সকাল ৯টায় কলাবাগান মাঠ থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত মৌন মিছিল। সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবর জিয়ারত। দুপুর ১২টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়াও দেশব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুুর প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী। আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাকেয়া প্রাচী বলেন, আমরা এখানে শোক প্রকাশ করতে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে। এখানে কোনো রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। আজ বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়েছে, ধানমন্ডি ৩২ পুড়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য এ বাংলাদেশ দিয়েছেন। আমরা ধানমন্ডি ৩২ এ দাঁড়িয়ে এ মহানায়কের কাছে ক্ষমা চাইছি, আমরা লজ্জিত, বাঙালি জাতি আজ লজ্জিত। পরে রোকেয়া প্রাচী অভিযোগ করে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের সময় আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা হয়। হঠাৎ আমাদের ঘিরে ধরে বেধড়ক পেটানো হয়।