নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ঋণের সুদ হার আরও কমানো দরকার বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা।
তারা বলছেন, আমাদের ঋণের সুদ হার কমানো হয়েছে। এটির শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি এখনো প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে আমাদের সুদ হার অনেক বেশি। তাই করোনার ক্ষতি মোকাবিলা ও বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সুদ হার আরও কমানো দরকার।
এদিকে করোনার প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে নীতিনির্ধারণী সুদের হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে যে ক্ষতি হয়েছে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের এ সুবিধা দেবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনোরুদ্ধারে বাংলাদেশেও স্বল্প সুদে ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের সুদ হার ৪ থেকে ৯ শতাংশ। তবে এসব ঋণের সুদ হার যদি আরও কম হতো তাহলে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকা আরও সহজ হত-বলছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ঋণের সুদ হার কমাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক খবর। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে তার একটা প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্যে পড়বে। তাদের ব্যবসা ভালো হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যে বাণিজ্য রয়েছে তারও উন্নতি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের যে রফতনি আদেশ স্থগিত হয়ে আছে তা ফিরে আসবে। রফতানি মূল্য সহজে পাব। কারণ তাদের সুদ হার কমে গেলে খরচ কমে যাবে। অর্থাৎ ডলার শক্তিশালী হলে আমাদের বাণিজ্যও বাড়বে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সুদ হার প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ এ ব্যবসায়ী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনোরুদ্ধারে সরকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ঋণের সুদ হারও কমানো হয়েছে। এটির সঠিক বাস্তবায়ন দরকার।
তিনি বলেন, বর্তমান যে সুদ হার বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি যদি আরও কমানো হতো তাহলে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হতো। কারণ ভিয়েতনাম, পাকিস্তানসহ প্রতিযোগী বেশিরভাগ দেশের চেয়ে আমাদের সুদ হার এখনো অনেক বেশি।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনোরুদ্ধারে স্বল্প সুদে ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে তারল্য সরবারহ বাড়াতে ব্যাংক রেট, রেপো সুদ হার কমানো হয়েছে।
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এক বছর বা ৩৬০ দিন মেয়াদি বিশেষ রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় বিধিবদ্ধ জমা হারের (এসএলআর) অতিরিক্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকে জামানত রেখে তহবিল নিতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিদ্যমান রেপোর সুদ হারকে ভিত্তি ধরে বিশেষ রেপোর সুদের হার ও পরিমাণ নির্ধারিত হবে। বর্তমানে রেপোর সুদ হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
করোনা সঙ্কটে অর্থের জোগান বাড়াতে প্রায় ১৭ বছর পর ব্যাংক রেট ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, ২০০৩ সালের পর থেকে ব্যাংক রেট ৫ শতাংশ ছিল। বিভিন্ন পলিসি রেট কমানো হলেও ব্যাংক রেট অপরিবর্তিত ছিল এই দীর্ঘসময়। ব্যাংক রেট হলো ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঅর্থায়ন সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দেয় তার সুদের হার।
এছাড়া চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সুদ হার প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বলেন, বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় যেসব বাধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ঋণের উচ্চ সুদ হার। তাই ঋণের সুদ হার যত কম হবে ব্যবসায়ীক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা তত বাড়বে। তবে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আমাদের দেখতে হবে। দেশের আর্থনীতি বিবেচনায় ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এসব ভালো উদ্যোগ। তবে ঋণের সুদ হার কমিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ঘাটতি যেন না হয় বিষয়টি নজর দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে সুদ কমিয়ে বাড়তি চার্জ নেয়া হচ্ছে- এটি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সুদ হার কমানো ঋণ প্রণোদনার যেসব প্যাকেজ রয়েছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। মহামরির যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো- বলেন পোশাক খাতের এ রফতানিকারক।