রাশেদ রাসু, নড়াইল প্রতিনিধি: গত ১৩ ই মে ২০২৪ তারিখ রাত আটটার দিকে খুন হয় ফয়সাল, ফয়সালের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লোহাগড়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামে, ফয়সালের মা বাবার দেওয়া তথ্য মতে ঐদিন ফয়সাল সন্ধ্যার আগে থেকেই একই গ্রামের ভ্যানচালক ইরাদতের সাথে ছিলেন এবং ওই সময়ই তার সাথে আরো ছিলো ওই গ্রামের রাসেল, রাজু,রুবেল ইরাদত, ইসমাইল, রইস ও ইয়ামিন, সেদিন তারা একটা পিকনিক করার উদ্দেশ্যে বাজার করতে যান, সন্ধ্যা ঘনিয়া আসছে এ সময় ফয়সালের মা ফয়সালকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাইনি। রাত আনুমানিক আটটার দিকে লোহাগড়া থানা পুলিশের একটি ফোন আসে ফয়সালের বাবার ফোনে, জানানো হয় আপনার ছেলে ফয়সালের মরা দেহ পড়ে আছে লোহাগড়া পৌর শহরের লক্ষীপাশা সাত নম্বর ওয়ার্ডের একটি সড়কে, ফয়সাল খুন হওয়ার দুদিন আগে থেকে স্থানীয় একটি বেকারির খাদ্য পণ্য সরবরাহ করতেন ফয়সাল, সাথে থাকতো উপজেলার ইতনা গ্রামের আরো একজন সহযোগী বাপ্পি, ফয়সাল খুন হয় ১৩ তারিখে, ১২ ও ১৩ তারিখ ফয়সালের ফোন নাম্বারে একাধিকবার কথা হয়েছে খাদ্য সরবরাহ সহযোগী বাপ্পির সাথে, এবং ফয়সালের আরো একজন বন্ধু যার বাড়ি মাগুরা জেলার শালীখা থানা এলাকায় নাম আসিফ, এই বন্ধু আসিফের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে একটা বিষয়ে সম্পর্ক তৈরি হয় ফয়সালের, তার সাথেও আগে পরে ফোনে অনেক বার কথা হয়েছে ফয়সালের। আরেক প্রতিবেশী সুমন, সম্পর্কে ফয়সালের বিয়াই ফয়সাল যেদিন খুন হয় সেদিন ফয়সালের ফোনে সন্ধ্যা ৭ টা ৩২ মিনিটে শেষ কলটি ছিল এই সুমনের।
ফয়সালের মা আরো জানান, সেদিন সন্ধ্যাবেলায় সুরা হাতে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে রইস, ইয়ামিন, ও সুমনকে। এর ৩০ মিনিট পর লোহাগড়া থানা থেকে খবর আসে ফয়সাল খুন হয়েছে।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে কথা হয় সুমনের সাথে, সুমন বলেন, আমার বাড়ি চরবগজুড়ি,ফয়সাল সম্পর্কে আমার বিয়াই হয় ঐদিন ৮ টার দিকে আমি শুনতে পারি ফয়সাল খুন হয়েছে, এ বিষয়ে আমার আর কিছু জানা নেই। ঐদিন ফয়সালের সাথে আরো যারা ছিল, রাসেল, রাজু,রুবেল ইরাদত, ইসমাইল, রইস ও ইয়ামিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। ১৩ তারিখ বিকাল থেকে ফয়সাল তার গ্রামের এদের সাথেই ছিলেন যেটার বর্ণনা দিয়েছেন ফয়সালের মা, ঐদিন সন্ধ্যার দিকে ফয়সালের মা একাধিকবার ফয়সাল কে ফোন দিয়েও পায়নি, সন্দেহ হলে ফয়সালের মা মধুমতি নদীর কূল ঘেঁষে খুঁজতে বের হন ফয়সালকে এসময় দূর থেকে ফয়সালের মা দেখে বেশ কয়েকজন তড়িঘড়ি করে ভ্যানে উঠে লক্ষ্মীপাশার দিকে চলে যাচ্ছে। এ সময় ফয়সালের মা ফয়সালের নাম ধরে চিল্লাতে থাকে কিন্তু তাতে কোন সাড়া মেলেনি। এবং ফয়সাল এর পরিবার দাবি করছেন ফয়সালকে ভাটিয়াপাড়া বাজার খেওয়া ঘাট এলাকায় একটি কলাবাগানে তাকে হত্যা কররার উদ্দেশ্যে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর ভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য রাস্তা দিয়ে লক্ষ্মীপাশার দিকে, এর মধ্যেই সুরিকাঘাতে মেরে ফেলে হয় ফয়সালকে।
এ বিষয়গুলো ফয়সাল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অমিত বিশ্বাস কে ফয়সালের পরিবার থেকে একাধিকবার জানালেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ফয়সালের পরিবারের, আরো অভিযোগ রয়েছে পরিবার থেকে যাদের সন্দেহ হয়েছে তাদের নাম ও একাধিকবার লোহাগড়া থানায় বললেও তাদেরকে আটক করার কোন চেষ্টাও করা হয়নি,
ফয়সালের মা-বাবা যখন এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, “আমরা গরীব ভ্যানচালক বলে কি আমাদের একমাত্র ছেলে ফয়সাল হত্যার বিচার পাব না?” তারা আইনি বিচার এবং হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অমিত বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং দ্রুতই সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবুও ফয়সালের পরিবার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।