প্রান্তিক পর্যায়ের ভোট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ফলে দলটির কর্মী-সমর্থকরা দীর্ঘদিন পর ফের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কেননা, ব্যালট পেপারে দলটির কোনো প্রতীক থাকবে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ভোট পেয়েছিলেন। এবার যেহেতু দলীয়ভাবে তারা প্রার্থী দেয়নি। সেক্ষেত্রে তাদের সমর্থকরা প্রতীকটিকে আর বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিএনপি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, এতে অনেকেই স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন। সেক্ষেত্রে প্রার্থী পছন্দ-অপছন্দের দোলাচলে অনেক ভোটারই বিএনপি সমর্থনকারী প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন। তাই বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলেও গতবারের চেয়ে ভোট কম পাওয়ার বিষয়টি থেকে যায়। কেননা, গ্রামের মানুষ বোঝে প্রতীক। তারা প্রার্থীর চেয়ে প্রতীক দেখেই ভোট দেন বেশি। এক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে প্রতীক না থাকলে অনেকেই অন্য প্রার্থী বেছে নেবেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ১০০ ইউপিতে ছয় ধাপে ভোটগ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেসময় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও, অনেক ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। তারপরও যেসব ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ৩৬৭ ইউপিতে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থিরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছিলেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৮ জন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার ২৫৯ জন ভোট দিয়েছেন। যা মোট ভোটের ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ২ কোটি ৩৮ ১৬ হাজার ৪৯৪ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
বিএনপির প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১২ ভোট, যা মোট ভোটের ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিলেন ১ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ১৪৭ ভোট, যা মোট ভোটের ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বলেন, যেসব দল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি নেই। তাই ব্যালট পেপারে দলটির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক থাকছে না। দলটির অনেকেই হয়তো নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকবেন। এক্ষেত্রে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে যারা দলীয়ভাবে প্রার্থী দিয়েছে, কেবল সেই সব দলের প্রতীকই থাকবে ব্যালট পেপারে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৪ মার্চ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। ২৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ হবে। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১১ এপ্রিল। গত ৩ মার্চ ৩৭১ ইউপিতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
প্রথম ধাপের ইউপি ভোটে মনোনয়ন বাছাইয়ের পর চেয়ারম্যান পদে একজন করে বৈধ প্রার্থী রয়েছে এমন ইউপির সংখ্যা ৩১টি। অর্থাৎ ৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তাদের কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে, তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
চেয়ারম্যান পদে সর্বমোট মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১ হাজার ৭৫০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১৯ মার্চ বাছাইয়ে বাতিল হয়েছেন ৭০ জন। অর্থাৎ বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৬৮০জন।
প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১ হাজার ৪৪ জন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৩৫৪জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২১৭জন, জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) ৩১জন, জাতীয় পার্টির (বাইসাইকেল) ৬ জন, জাতীয় সামজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ৩জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির একজন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একজন, জাকের পার্টির ১৩ জন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের একজন প্রার্থী নির্বাচনে বৈধতা পেয়েছেন।
এদিকে, সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৪ হাজার ৩০৮জন, বাছাইয়ে বাতিল হয়েছেন ৫৮ জন আর বৈধতা পেয়েছেন ৪ হাজার ২৫০জন। আর সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১৪ হাজার ৪৩১ জন প্রার্থী। বাছাইয়ে বাতিল হয়েছেন ২২৫জন। আর বৈধতা পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৬ জন প্রার্থী।