মোঃ আনজার শাহ:ভ্রমণ, পড়াশোনা, ব্যবসা এবং চিকিৎসার জন্য ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের প্রতিনিয়তই ভিসার জন্য হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আবার দ্বিগুণ, তিনগুণ টাকা খরচ করেও অনেকে ভিসা পাচ্ছেন না। তাই ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের ভোগান্তি কমাতে বাংলাদেশেই বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস অথবা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার চালুর দাবি জানিয়েছে ইউরোপগামী ভিসা প্রত্যাশী ঐক্য যাত্রী পরিষদ।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আকরাম খাঁ হলে ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস-ভিসা সেন্টার চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
দিল্লিতে অবস্থিত ইউরোপীয় এম্বাসি ও কনস্যুলেট গুলোতে বাংলাদেশের নাগরিকরা সময়মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত। সঠিক নথিপত্র পাওয়ার পরও ভারত ভ্রমণের জন্য আমাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে যার জন্য ভিসা আবেদন, কনস্যুলার সেবা পেতে সময় লাগছে। একইভাবে নেপালে অবস্থিত বিভিন্ন দুতাবাসে ভিসার আবেদনের জন্য বিভিন্ন সময় কারন ব্যতীত অফলোড করা হয় ফলে অনেকেই ভিসা আবেদনে ব্যর্থ হচ্ছে আবার উল্লেখিত স্থানগুলোতে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময়, ভ্রমণ ব্যয়, হোটেল খরচ এবং আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের ভিসা আবেদনকারীরা একটা বিশাল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানষিক চাপঅনুভব করেন।
আমরা মনে করি ইউরোপীয় সকল কনস্যুলেট ও এম্বাসি কার্যক্রম যেন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা যায় তা নিশ্চিত করা জরুরি, তাতে ইউরোপের দেশগুলোতে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী যেতে পারবে এবং বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।
আমাদের উদ্দেশ্য কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা নয়, বরং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে আমরা ইউরোপের সকল দেশে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারি। বাংলাদেশে যদি ইউরোপীয় কনস্যুলেট এবং এম্বাসি কার্যক্রম চালু করা হয় তবে আমাদের নাগরিকদের ইউরোপে প্রবেশের প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে এবং অর্থ সাশ্রয় হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা সহ-মাননীয় উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টিগোচর করা এবং এটা বুঝানো যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র
উপদেষ্টা যদি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপের দেশ গুলোর সাথে কথা বলে বাংলাদেশে তাদের মিশন চালু করার ব্যবস্থা করেন।
আমরা বিশ্বাস করি ২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের মধ্যে দায়িত্ব নেওয়া শান্তিতে নোভেল বিজয়ী আন্তরিক ইচ্ছাপোষণ করলে বাংলাদেশে ইউরোপের সকল দেশের মিশন চালু করবেন। কারন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ঐ পরিমাণ গ্রহনযোগ্যতা ইউরোপের সরকার প্রধানদের কাছে আছে। সুতরাং আমাদের আকুতি দ্রুত তিনি যেনো গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি আমলে নেন।প্রস্তাবনাঃ
আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে ইউরোপীয় কনস্যুলেট এবং এম্বাসি কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো অর্জন করা সম্ভব:
১) সময় ও খরচ সাশ্রয়: বাংলাদেশে যদি সকল কার্যক্রম চালু থাকে, তবে দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এতে করে সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচবে, জনগন উপকৃত হবে ইউরোপ গমনে খরচ কমবে।
২) কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি: স্থানীয় সেবা গ্রহণের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজ হবে, ফলে নাগরিকরা দ্রুত ভিসা ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
৩) সেবা প্রদানে গুণগত মান বৃদ্ধি: বাংলাদেশে সরাসরি এম্বাসী/কনস্যুলেট কার্যক্রম চালু থাকলে, আমাদের নাগরিকরা সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পেতে সক্ষম হবেন এবং কোনো দ্বিধা ছাড়াই সহজে পরামর্শ নিতে পারবেন।
৪) স্থানীয় কর্মসংস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়ন: এই পদক্ষেণে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারেঃ
১) সরকারের সাথে সংলাপ: আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারকে এই সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে চাই যেন ভারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
২) ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সাথে আলোচনা: ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে মিটিং আয়োজন করা এবং কনস্যুলেট কার্যক্রম বাংলাদেশে চালু করার গুরুত্ব বোঝানো।
৩) জনগণের সহায়তা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সহায়তা নিয়ে সরকারের কাছে এই বার্তা পৌঁছানো।
এছাড়া ভারতের খামখেয়ালির কারণে ইউরোপের ভিসাপ্রত্যাশীদের দুর্দশা বেড়েছে জানিয়ে আনজার নামে ভিসা প্রত্যাশী বলেন, ভারতের খামখেয়ালির কারণে প্রতিনিয়ত হাজার-হাজার ইউরোপীয় ভিসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশি নাগরিকদের চরম বিপত্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধু ভারতীয় ভিসা না পাওয়ার কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ইউরোপের অ্যাম্বাসি ফেস করতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশিরা ইউরোপের ভিসা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে দেশ বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার ভিসার জন্য অ্যাম্বাসি ফেস করতে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের গড়ে জনপ্রতি এক-দেড় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে দূতাবাস বা ভিসা সেন্টার থাকলে এই বাড়তি খরচ হতো না। কারও ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ওপর আমাদের ভিসা পাওয়া নির্ভর করতো না।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের মিশন কার্যক্রম চালু করা মানে আমাদের নাগরিকদের জন্য আরও সহজতর ও কার্যকর সেবা প্রদান করা। আমরা দিল্লির সাথে কোনো বিরোধে আসতে চাই না বরং আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে সরকারকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনের মাধ্যমে সচেষ্ট করা।