বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার একটি কমন সমস্যা বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, এন জি ও বিভিন্ন ভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।
বাল্যবিবাহ সমাজের একটি ভয়ানক সমস্যা, যা শিশুদের শৈশব, শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ধ্বংস করে। এটি কেবল ব্যক্তির ক্ষতি করে না, বরং পুরো সমাজের উন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টি করে। যদিও বিশ্বজুড়ে এই প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবুও এটি এখনও অনেক জায়গায় প্রচলিত, বিশেষত গ্রামীণ এবং দরিদ্র এলাকাগুলোতে।
বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক:
১. শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি:
অল্প বয়সে বিয়ে হলে মেয়েদের শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হয় না। অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সে গর্ভধারণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। মায়ের মৃত্যুর পাশাপাশি শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
২. শিক্ষার সুযোগ হ্রাস:
বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা তাদের পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারে না। তারা আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
৩. দারিদ্র্যের চক্র:
বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা দক্ষতার অভাবে কর্মসংস্থান পায় না, যা পরিবার এবং সমাজের দারিদ্র্যের চক্রকে অব্যাহত রাখে।
৪. পারিবারিক সহিংসতা:
বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েরা প্রায়শই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় না এবং প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও হারায়।
৫. সামাজিক বৈষম্য:
বাল্যবিবাহ নারীর প্রতি বৈষম্যের একটি বড় উদাহরণ। এটি নারীদের সমঅধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে বড় বাধা।
বাল্যবিবাহ রোধ করার উপায় সম্পর্কে এ বিষয় নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সংগে কথা বলে প্রতিকারের উপায় হিসেবে যা উঠে এসেছে-
১. শিক্ষার প্রসার:
মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে এবং মেয়েদের স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. আইনের কঠোর প্রয়োগ:
বাল্যবিবাহ রোধে বিদ্যমান আইন কার্যকর করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আইনি পদ্ধতিকে আরও সহজ করতে হবে।
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি:
সমাজের প্রতিটি স্তরে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। গণমাধ্যম, এনজিও এবং স্থানীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে।
৪. নারীর ক্ষমতায়ন:
মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. পরিবার ও সমাজের ভূমিকা:
পরিবার এবং সমাজকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। শিশুদের মতামত ও স্বপ্নের প্রতি সম্মান জানানো উচিত।
৬.শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি দের ভূমিকা:
শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি দের কার্যকর ভূমিকা এই সামাজিক ব্যাধি সমাজ থেকে মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।কারণ শিক্ষকগণ সমাজের দর্পণ।
উপসংহার:
বাল্যবিবাহ একটি ভয়ানক সামাজিক অভিশাপ। এটি দূর করতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষা, সচেতনতা এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রত্যেক শিশুর জন্য শৈশব যেন আনন্দময় ও সম্ভাবনাময় হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশুর অধিকার রক্ষা করতে পারলে আমরা একটি সুখী ও উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে পারব।