সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতকে সমতা স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় এর হিসেব না দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাত করে এখনো ও তার প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে আছেন। পৃথক তিনটি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে দাখিল করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোন সুফল মিলছেনা। আত্মসাতকৃত অর্থও উদ্ধার হচ্ছে না। ফলে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক পার পেয়ে যাচ্ছেন এবং সু বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগকারীরা। অভিযোগ সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সিংচাপউড় ইউনিয়নের সমতা স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওই বিদ্যালয়ে চাকুরী করে আসছেন। দুই এক বছরের মধ্যে হয়তো অবসরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন নাসির উদ্দিন। তিনি ১৯৮৩ সালে অফিস সহকারী পদে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারি শিক্ষক ও পরে সহকারী প্রধান ছিলেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ওই সেপ্টেম্বরেই সিংচাপইড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নাসির উদ্দিন একই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। প্রধান শিক্ষক পদে তিনি উপযুক্ত না হলেও দলীয় ক্ষমতার দাপুটে তিনি উপযুক্ত বনে যান। যদিও সে সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দের ছিল তার বিরুদ্ধে অযোগ্যের বিস্তর অভিযোগ। তিনি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো মূলক কোন উন্নয়ন না করে নিজের পকেট উন্নয়ন করেছে। এতে গভর্নিং বডির সদস্যরা বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করলে পতিত হাসিনা সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা ওই প্রধান শিক্ষক তাদেরকে অপমান করেছেন। তার দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন দীর্ঘদিন। চলতি বছরের ৫ আগষ্টের পর তিনি কিছুটা নিরব হলেও প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা হজম করার চেষ্টায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩ ও ১৪ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে বরাবরে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গভর্নিং বডির সদস্য গিয়াস মিয়া এবং আবুল কালাম আজাদ। তাতেও কোন সুফল পায়নি অভিযোগকারীরা। সে সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন ফারুক আহমদ। প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতূন কমিটি গঠন না করায় চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারি গোপনীয় ভাবে গঠিত হয় এডহক কমিটি। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক সিতাব আলীকে। এদিকে এডহক কমিটির সভাপতি সিতাব আলীর নেতৃত্বে গঠিত আর্থিক নিরীক্ষণ কমিটি জানায়, প্রধান শিক্ষকের কাছে ২০ লাখ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে। সঠিক ভাবে নিরীক্ষণ করা হলে আরও ১০-১৫ লাখ টাকার অনিয়ম মিলবে বলে এলাকাবাসীকে জানিয়েছিলেন সাবেক এডহক কমিটির সভাপতি। গত ১৬ অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের এ অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সোহেল আহমদ, আওলাদ মিয়া, আবদুল মন্নানগং। সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দ তার এলাকায় একটি রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ না করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেন ওই প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য নিয়ে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে পরদিন উপজেলা সরকারী কোষাগারে দেড় লাখ টাকা ফিরত দিয়ে আসেন ওই শিক্ষক। সাবেক এডহক কমিটির সভাপতি, প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক সিতাব আলীর মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি নবাগত ইউএনও, বিষয়টি জেনে তদস্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।