1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের অবরোধ, মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বড় কারণ জানালেন অর্থ উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয় : আসিফ আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ পাড় এনামুল হক বিজয়ের দেশত‍্যাগে নিষেধাজ্ঞা জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় সিঙ্গাপুরের চক্ষুচিকিৎসক দল ঢাকায় শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি, পবিত্র শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা নাহিদ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে সড়ক অবরোধ যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষ, ১৮ মরদেহ উদ্ধার

খলিল উপাখ্যান: মিডিয়া ওয়াচ আরসাদ মাহমুদ

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মাস দুয়েক আগে অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টা পদমর্যাদায় এক সাবেক কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়েছেন রোহিঙ্গা বিষয়ে দেখাশোনা করার জন্য। তার পদবী হল হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ।

এই নিয়োগ নিয়ে পত্রপত্রিকায় তেমন কোন ঘোষণা দেখিনি। আমি প্রথম জানলাম পিনাকি ভট্টাচার্যের ভিডিও থেকে। তার খুব প্রশংসা করে পিনাকী বলেছে যে ডক্টর ইউনুস তার সাজেশন নিয়ে খলিল সাহেবকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং সে কারণে তিনি খুবই খুশি। তখন আমি পিনাকির ফেসবুক পোস্টে খলিল সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলাম। জানিনা সেটা সে দেখেছিল কিনা।

প্রশ্ন হল কে এই খলিল সাহেব? আমি তার সম্পর্কে প্রথম জানি আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে। তার পুরো নাম খলিলুর রহমান। ১৯৭৯ ব্যাচের বিসিএস পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ করেছিলেন সম্ভবত প্রথম হয়েই। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে যোগ দেন এবং কিছুদিন পর বোস্টন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। অর্থাৎ তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

এসব কিছুই তার পজিটিভ দিক। কিন্তু এর অন্তরালে তার একটা কুৎসিত দিক আছে এবং সেটা জানানোর জন্যই আজকে আমার এই পোস্ট।

এ প্রসঙ্গে বলে নেই খলিল নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশনে কয়েক বছর কাজ করার পর লিয়েন নিয়ে জাতিসংঘের কোন একটি দপ্তরে যোগ দেয়। এরপর দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করে এবং স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ সরকারে তার পদোন্নতি হয় নাই। হঠাৎ খলিলের আবির্ভাব হয় দেশে ২০০১ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান সাবেক বিচারপতি লতিফুর রহমানের সময়। তাকে কেন হঠাৎ করে দেশে নিয়ে আসা হলো এটা যখন অনুসন্ধান করলাম তখন জানা গেল যে সে লতিফুর রহমানের ভায়রাভাই। দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে প্রধান উপদেষ্টার প্রাইভেট সেক্রেটারি বানানো হয়। এই পদটি সরকারের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের। কিন্তু যেহেতু খলিল বাংলাদেশ সরকারের চাকরিতে ছিল না, সে কারণে সে উপসচিব হতে পারেনি। লতিফুর রহমান তখন তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথমে উপসচিব এবং পরে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তার দপ্তরে নিয়োগ দেয়।

বিষয়টি আমি লতিফুর রহমানের গোচরে আনি তার প্রথম প্রেস কনফারেন্সে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আপনি একজন বিচারপতি। আর কি করে আপনি এরকম একটি বেআইনি কাজ করলেন? একদিনের মধ্যে দুটো প্রোমোশন দিয়ে তাকে বিদেশ থেকে কেন নিয়ে আসা হলো? এটা কি বেআইনি হয়নি? দেশে কর্মরত কাউকে কি আপনি আপনার একান্ত সচিব করার মত যোগ্য লোক পাননি?

উত্তরে সেই সময়ের প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বললেন যে সে অত্যন্ত মেধাবী এবং এ কারণেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি তাকে বললাম যে আমি খলিল সাহেবের মেধা নিয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। আমি শুধু জানতে চেয়েছি যে কেন তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটো প্রমোশন দিয়ে আপনার একান্ত সচিব বানানো হলো? এর কোন সদুত্তর তার কাছে ছিল না এবং তিনি আমতা আমতা করতে থাকেন।

এরপর যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা ছিল ভয়ংকর এবং হৃদয় বিদারক। এবং খলিল ছিল তার কেন্দ্রবিন্দু।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে নিয়োগ পাওয়ার মাস খানেকের মধ্যেই সে ওই সচিবালয়ের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে পড়ে। ওই নারী কর্মকর্তা ছিল বিসিএস প্রশাসনের। মহিলার স্বামীও ছিল বিসিএসের কর্মকর্তা। এরপর খলিল মহিলাকে আরো নিবিড়ভাবে পাওয়ার জন্য নিউইয়র্ক মিশনে তাকে বদলির ব্যবস্থা করে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন মাসের পর খলিলও নিউইয়র্কে চলে যাবে।

এতে ঘোর আপত্তি জানায় মহিলার স্বামী এবং এটা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো। এই দম্পতির একটা প্রতিবন্ধী সন্তান ছিল। এক পর্যায়ে যখন মহিলা দৃঢ়ভাবে জানায় সে নিউইয়র্কে চলে যাবে তখন তার স্বামীর সঙ্গে প্রচন্ড ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তার স্বামী মহিলাকে গুলি করে এবং নিজে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পরপরই খলিল দ্রুত দেশ থেকে পালিয়ে যায় এবং আমার জানামতে সে আর কখনো আসেনি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি যে এই দম্পতির প্রতিবন্ধী সন্তানের কথা কি একবারও খলিল চিন্তা করেনি?

প্রশ্ন হল ডঃ ইউনুস কেন তাকে নিয়োগ দিল? তিনি কি খলিলের এই ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতেন না? ধরে নেই যে তিনি হয়তো এটা সম্পর্কে ওয়াকিবাল ছিলেন না। কিন্তু ডক্টর ইউনুসের উচিত ছিল এই ধরনের নিয়োগ দেওয়ার আগে ভালো করে খোঁজখবর করা।
সবচেয়ে বড় কথা আপনি উপদেষ্টা পদমর্যাদায় একজনকে নিয়োগ দিচ্ছেন এবং এই দেশের ট্যাক্সপেয়াররা তার সমস্ত ভরণপোষণ বহন করবে। এর জবাবদিহি ডঃ ইউনুসকে একদিন অবশ্যই করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আমি কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে অনুরোধ করব ব্যাপারটি নিয়ে খোঁজ খবর করতে এবং সেই মামলার বর্তমান অবস্থা কি সেটা আমাদেরকে জানাতে।

গত সন্ধ্যায় খলিলের একজন সিনিয়র কলিগ এক সাবেক রাষ্ট্রদূত আমাকে ফোন করেন। তিনি একসময় খলিলের সঙ্গে নিউইয়র্কে চাকরি করতেন। আমি খলিল সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমেই বললেন সে প্রথম শ্রেণীর ধান্দাবাজ এবং নিজের আখের গোছানোর জন্য যা করা প্রয়োজন সে সবই করে।

প্রশ্ন হল এ ধরনের সূট -টাইওয়ালা মেধাবীদের দিয়ে এই জাতি কিভাবে উপকৃত হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অধিকাংশ আমলার মতই এরা দেশের থেকে নিজের স্বার্থই বেশি দেখে। এদের আরেকটি বড় ক্যারেক্টারিস্টিক হল এরা সরকারে থেকে যত রকম সুযোগ-সুবিধা ফ্রি নেওয়া যায় সেটাতে খুব পারদর্শী।

এবার আসি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে। এখানে মোটামুটি চারটা বড় ফ্যাক্টর আছে। মিয়ানমার ছাড়াও আছে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র। আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার না খলিল বা ডক্টর ইউনূসের কথা শুনে কেন এই দেশগুলো তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করবে। আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন সময়ের মধ্যে এই সমস্যার কোন সমাধান হবে না। এবং এই সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে খলিল দেশ থেকে চলে যাবে। সে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী অধিবাসী বাসী। আর রোহিঙ্গা সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। খলিলের নিয়োগে যে সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি সে হলো খলিল নিজে।

আমি তার তার সম্পর্কে প্রথম জানি যখন সে নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশনে একজন জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন। আমি তখন সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট। তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম নিউইয়র্ক মিশনে সে তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি জেনারেল এরশাদের শ্যালক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। তাকে সকাল-বিকেল তোয়াজ করে তার আখের গুছিয়ে নিয়েছিল।

এক সাবেক রাষ্ট্রদূত (যিনি সেই সময় খলিলের সঙ্গে নিউইয়র্ক মিশনে ছিলেন) আমাকে বললেন যে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর অফিসে আসার সময় খলিল এবং কয়েকজন তার সহকর্মী মিলে নিচে নেমে তাকে রিসিভ করতে যেত এবং অফিস থেকে যাওয়ার সময় আবার তার সঙ্গে নিচে যে তাকে গাড়িতে তুলে দিত। এটা ছিল তাদের প্রতিদিনের কাজ। এর মধ্যে খলিলের কাজ ছিল মহিউদ্দিন সাহেবের ব্যাগ ক্যারি করা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি