রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অগ্নিকাণ্ডে ১৭ জন প্রাণহানির ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৭ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবু আসলামকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ নিতে স্বজনেরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এসেছেন। শনিবার সকাল থেকে তারা মরদেহ হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের দেহ ভস্মীভূত হওয়ায় তাদের পরিচয় শনাক্ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, নিহতদের ডিএনএ’র সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ মিলিয়ে পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। বিকেলের মধ্যেই স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। সরকারি খরচে মরদেহগুলো পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, দুর্ঘটনায় নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তারা শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীতে শহীদ জিয়া শিশু পার্কে পিকনিক করতে আসছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস মহানগরীর কাপাশিয়া এলাকায় পৌঁছালে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুন ধরে যায়।
মাইক্রোবাসে চালকসহ মোট ১৮ জন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ৭ জনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদের মধ্যে ৬ জনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া আরও ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- পীরগঞ্জের রাঙ্গামাটি গ্রামের সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২), শামসুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৩৭), উপজেলা সদরের ভুট্টু (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০), ছেলে ইয়ামিন (১৫), বড় মজিদপুরের ফুলমিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫) এবং মেয়ে সুমাইয়া (৮), সাবিহা (৩), দুরামিঠিপুরের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম (৪৬) এবং মাইক্রোবাসের চালক হানিফ (৩০)। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পঁচাকান্দ গ্রামে।
মাইক্রোবাসে যাত্রীদের মধ্যে বেঁচে আছেন শুধু পাভেল (২৭) নামে একজন। তিনি এখন রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। দুর্ঘটনায় তার বাবা মোখলেসুর রহমান (৪৫) ও মা পারভীন বেগম (৪০) নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি পীরগঞ্জের ডারিকাপাড়া গ্রামে।
শনিবার রামেক হাসপাতালে মরদেহ নিতে এসেছেন নিহত শহীদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হুদা (২০)। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনার খবর দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। টিভি খুলে দেখি একই নিউজ দেখাচ্ছে। এরপর আব্বাকে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাই। গাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কয়েকজনকে ফোন করে দেখি তাদের নম্বরও বন্ধ। পরে পত্রিকায় আব্বার নাম দেখতে পাই।