হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কাল প্রায় ৫ বছর পর দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হবে। গত ৫ বছরে হরতাল হয়নি বললেই চলে। বিএনপি এবং বাম দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে আধাবেলা ঢিলেঢালা হরতাল ডেকেছিল। ঐ সব হরতাল জনজীবনে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে আগামীকালের হরতাল নিয়ে একধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। কারণ, মৌলবাদী এই গোষ্ঠীটি জনগণের কাছে পরিচিতি পেয়েছে আতংক এবং তাণ্ডব ছড়িয়ে। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজত ঢাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা ঢাকাবাসী ভুলতে পারেনি। এরপর হেফাজত যতবার মাঠে নেমেছে ততবারই পেশী শক্তির প্রদর্শন করেছে। ভীতি এবং আতংক ছড়িয়েই হেফাজত শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছে। একারণেই জনমনে একধরনে অস্বস্তি রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হেফাজত কি করতে চায়?
হেফাজত নিজেরাই দাবী করে তারা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক একটি সংগঠন। কিন্তু ঐক্য এবং পরিশ্রমী কর্মীদের কারণে রাজনীতিতে হেফাজতের চাহিদা বেড়েছে। ২০১৩ সালে সরকার পতনের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে হেফাজতকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বিএনপি এবং জামাত। এরপর আওয়ামী লীগ হেফাজতের সাথে এক সমঝোতায় যায়। আল্লামা শফীর আমীর থাকাকালীন সময়ে হেফাজতকে ‘বশীভূত’ রাখার কৌশল ভালোই কার্যকর ছিলো। কিন্তু আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নেয় জুনায়েদ বাবু নগরী। বাবু নগরী উগ্র মৌলবাদী এবং বিএনপি-জামাত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া ২০১৩ সালের ঢাকা তাণ্ডবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রতি তার একধরনের ক্ষোভ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাবু নগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার মাধ্যমে হেফাজত আসলে একটা ইস্যু তৈরি করতে চেয়েছিল। রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করতে চেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে, হেফাজত নিজে একটি রাজনৈতিক শক্তি নয়, কিন্তু রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার হিসেবে তারা ব্যবহৃত হয়। সরকারকে কোণঠাসা করতে এবং চাপে ফেলতেই হেফাজতকে মাঠে নামানো হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে, কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বাবু নগরীর একটি রাজনৈতিক অভিলাষ রয়েছে। আগামী ক’দিনে হেফাজতের কার্যক্রমে আসলে বোঝা যাবে তারা কি চায়।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার