করোনায় সংক্রমিত হওয়ার তিন দিন পর স্বাদ–গন্ধের অনুভূতি চলে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ বছরের এলিজাবেথ মেডিনার। সেটি গত বছরে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকের ঘটনা। সে সময় সবকিছু খেতে কাগজের মতো লাগছিল মেডিনার। এক বছর পরেও মেডিনা তাঁর স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি ফিরে পাননি। তাঁর আশঙ্কা, তিনি আর এই অনুভূতি নাও ফিরে পেতে পারেন।
এএফপির খবরে জানা যায় মেডিনা নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা করেছেন। অনেক ধরনের নাকের স্প্রে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তাঁর মতো যাঁরা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পরও স্বাদ ও গন্ধ ফিরে পাননি, তাঁদের মাছের তেল দিয়ে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা করা হচ্ছে।
অনুভূতি ফিরে পেতে মেডিনা তাঁর খাবারে প্রচুর মসলা দেন। ঝাঁজালো ভেষজ মিশিয়ে চা পান করেন। হাতের চুড়ি ভেষজ তেলে ভিজিয়ে রেখে নিয়মিত গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে এলিজাবেথ মেডিনার সব প্রচেষ্টাই বৃথা হয়ে যায়। নিউইয়র্ক স্কুল কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেন মেডিনা। তিনি বলেন, রান্না করা ও খাওয়ার সময় তিনি কোনো স্বাদ ও গন্ধ পান না। কোনো কিছুই খেতে ভালো লাগে না তাঁর। কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন কাঁদেন মেডিনা।
ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ভ্যালেন্টিনা পার্মা বলেছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পরে স্বাদ ও গন্ধ হারালে বেশির ভাগ রোগী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে তাঁদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর কয়েক মাস ধরে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি থাকে না। করোনা মহামারি শুরুর দিক থেকে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি নিয়ে কাজ করছে গ্লোবাল কনসোর্টিয়াম ফর কেমোসেনসরি রিসার্চ (জিসিসিআর)। জিসিসিআরের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন ভ্যালেন্টিনা পার্মা। তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখ মানুষ ও বিশ্বব্যাপী এক কোটি মানুষের মধ্যে করোনার প্রভাবে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে গেছে।
শোনা অথবা দেখার সমস্যার চেয়ে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিকে অনেক ক্ষেত্রে কম প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। পার্মা বলছেন, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে গেলে পুষ্টিজনিত, উদ্বেগ ও হতাশার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেডিনা স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের মাধ্যমে সহায়তা পেয়েছেন। এই গ্রুপ ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক দল।
খাদ্যবিশারদ লিয়েহ হলজেল মহামারি শুরুর সময় থেকে যাঁরা স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি দীর্ঘ মেয়াদে হারিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর সহায়তায় এ পর্যন্ত ছয়জন সুস্থ হয়েছেন।
এমনই একজন ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের বাসিন্দা ডমিনিকা উহরাকভা। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর পর তিনি স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি ফিরে পেয়েছেন। ২৬ বছরের এই নারী বলেছেন, তিনি আশা ছাড়েননি। তিনি সবার মঙ্গল কামনা করেন।