শেরপুরঃ রোকনের চোখে মুখে অনেক স্বপ্ন। সমবয়সীরা খেলাধূলা করে। বই, খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যায়। তাকে করতে হচ্ছে মুচির কাজ। ১০ বছর বয়সেই হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। বাবার অসুস্থ্যতার জন্য তাকে বসতে হচ্ছে ফুটপাতের মুচির দোকানে।
ফাল্গুনের দুপুরের কড়া রোদে খোলা আকাশের নিচে বসে কাজ করছে। জুতার কালিতে ঢাকা পড়ছে তার জীবনের স্বপ্নগুলো। বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর বাজারে ফুটপাতে বসা ওই শিশুর সাথে কথা হয়। রোকন জানায়, তার পড়ালেখা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তার বাবার অসুস্থ্যতার কারণে তাকেই করতে হচ্ছে মুচির কাজ।
উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের চকবন্দি গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের হতদরিদ্র নাইকা রবিদাসের ছেলে রোকন। তারা ২ ভাই। ২ বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন ৫ সদস্যের এই পরিবারে একমাত্র আয়ের পথ মুচির কাজ। স্থানীয় ঝগড়ারচর মধ্য বাজারে প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাতে বসে জুতা সেলই আর কালি করে সংসার চালাতো নিকাই। কিন্তু গত বছর করোনার প্রথম থেকেই কমে যায় জুতা সেলাই ও কালি দেয়ার কাজ। এর পর থেকেই তাদের সংসারে দেখা দেয় টানাপোড়েন। এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলায় থাকতে হয় না খেয়ে। এখনও সে রেস কাটেনি। স¤প্রতি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছে নেকাই। বন্ধ হয় উপার্জন। সংসারে বেড়ে যায় অভাব অনটন। চরম সংকটে পড়ে তার পরিবার। এ সংকট থেকে উত্তরণে হাল ধরে রোকন। সকাল থেকে কাজ করে জুতা সেলাইয়ের। দিনে ২শ হতে আড়াইশ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে কোনো মতে চলে তাদের সংসার।
অথচ রোকন স্কুলে পড়ালেখা করতো। তার বাবার এ অবস্থার কারণে এখন পড়া লেখাও বন্ধ। এ সময় রোকন বলতে থাকে, “খাইতে পাই না। পড়া লেহা করমু ক্যামনে। মা, বাবা, ভাই, বোন না খাইয়া থাহলে কি পড়ালেহা করণ যাইবো?” তার মা সাথিয়া রবিদাস জানায়, “আমরা অহন মেলা কষ্টে আছি। পোলাডারে পড়ালেহা করবার চাইছিলাম। ঠেহাই ছাড়েনা। তিনি আরো বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যানরা কত কিছু দেয়। আমগোরে কিছুই দেয় না। কেউ কিছু দিলে পোলাডারে পড়ালেহা করাইতাম। তাদের প্রতি সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন। এমনটাই মনে করেন স্থানীয় সচেতন মানুষরা।