ছোটবেলার পাঠ্যপুস্তকে একজন দরিদ্র কৃষকের গল্প সবাই জানে। সেই গল্পের দরিদ্র কৃষকের নাম হলো গনি মিয়া। গল্পের শুরুটা ছিল এরকম, গনি মিয়ার নিজের জমি নাই অন্যের জমিতে চাষ করে। বিএনপির রাজনীতি এখন গনি মিয়ার মতো হয়েছে। বিএনপি নিজেদের কোনো ইস্যু নেই। অন্যের ইস্যুর পিছনে বিএনপির ছোটে এবং অন্যের আলোতে আলোকিত হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপির রাজনীতিকে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেন। চাঁদের যেমন নিজস্ব আলো নেই, সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। তেমনি বিএনপি অন্যান্য দল, গোষ্ঠী বা সংগঠনের ইস্যুতে উত্তেজনা অনুভব করে এবং সেটি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে। এর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনেও বিএনপিকে গনি মিয়ার মতো আন্দোলনের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এবার হেফাজতের আন্দোলনের পরও বিএনপি রাজপথে দেখা যাচ্ছে। যদিও বিএনপি প্রকাশ্যে বলছে হেফাজতের তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু হেফাজতই যেন বিএনপিকে আশা দেখাচ্ছে। হেফাজতের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বিএনপি যেন মাঠে নামার চেষ্টা করছে।
হেফাজত দেশের যে তিনটি জায়গায় নাশকতা এবং তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করেছিল সেই তিনটি জায়গা ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রাম। ঢাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের পথ ধরে বিএনপি`র নেতা নিপুন রায় চৌধুরী বাস পোড়ানোর জন্য কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই অডিও শুনলে বোঝা যায় যে তিনি ওই কর্মীকে লোভ দেখিয়েছিলেন যে এই বার্তাটি তিনি তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেবেন। চট্টগ্রামে গতকাল হেফাজতের দেখানো পথে বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত এর নেতৃত্বে তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত ডা. শাহাদাত গ্রেপ্তার হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এখন বিএনপি এবং হেফাজত একাকার হয়ে গেছে। বিএনপিকে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বলা হচ্ছে হেফাজতের পানি সরবরাহকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুটি দলের মধ্যে একটি হলো বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছে দলটি। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থাকার মাধ্যমে তারা যে সুযোগটি পেয়েছিল সেই সুযোগটি তারা কাজে লাগাতে পারেনি। বরং ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেয়া এই দলটি ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষীণ হতে হতে বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে। এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন দলের উপর নির্ভর করতে হয় এ দলটিকে। এখন যেমন হেফাজত আন্দোলন শুরু করেছে তখন বিএনপি মনে করছে এই আন্দোলন থেকে তারা হয়তো লাভবান হবে। কিন্তু হেফাজতের এই আন্দোলন থেকে বিএনপি কিভাবে লাভবান হবে বা হেফাজতের এই আন্দোলন বিএনপিতে গতি আনবে কিনা সে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম হাস্যরস এবং কৌতুক রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, হেফাজতকে উস্কে দেওয়া এবং হেফাজতকে রাজনীতিকরণের ক্ষেত্রে বিএনপি`র একটা ভূমিকা রয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল সেই সময় বিএনপির নেতারা হেফাজতের সমাবেশ স্থল শাপলা চত্বরে গিয়েছিলেন, হেফাজতের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছিলেন, সমর্থন জানিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। তাহলো বিএনপি সবসময়ই স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদদ দেয়, পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং তাদের সঙ্গে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এখন হেফাজত যখন নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে তাণ্ডব চালালো তখন বিএনপি যেন তাদেরকে এক ধরনের মৌন সমর্থন দিল। বিএনপির নেতারাও স্বীকার করেন যে তারাও সরকারকে হটাতে চান। কিন্তু সরকার হটানোর মত শক্তি সামর্থ্য তাদের নাই। আর এই কারণেই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের উপর ভর করেন, বিভিন্ন ইস্যুর উপর নির্ভর করেন। এখন যেমন হেফাজতেই তারা আশার আলো দেখছেন।